সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ: এখনও তত্পর জেএমবি বিচারাধীন ৫৯ মামলা
প্রকাশ: ১২:১৭ pm ১৭-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:২৫ pm ১৭-০৮-২০১৭
 
 
 


২০০৫ সালের এই দিনে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের জানান দেয় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ভয়াল ওই ঘটনার এক যুগে এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে নির্মূল করা যায়নি। এখনও তারা তত্পর। মাঝেমধ্যেই তারা সক্রিয় হয়ে উঠছে। ধরাও পড়ছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এদিকে ২০০৫ সালের মামলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিচার কাজ শেষ হয়নি এখনও। গত বছরের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজানে। তার এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত চলাকালে প্রকাশ্যে জঙ্গিরা হামলা চালায়। নব্য জেএমবির দুটি হামলার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতে একের পর এক অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা নিহত হয়।   পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে জঙ্গিদের খণ্ড খণ্ড হয়ে নাশকতা ঘটানোর মতো শক্তি থাকলেও তা গোয়েন্দাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পান্থপথে একটি আবাসিক হোটেলে সাইফুল ইসলাম নামে এক জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হয়। সাইফুল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর এলাকায় জাতীয় শোক দিবসে শত শত মানুষকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল বলে জানান পুলিশের আইজি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৫শ’র বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান জানান দেয়। নিজেদের শক্তির জানান দেওয়া ওই হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও নামে-বেনামে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। বর্তমানে নতুন নামে, ভিন্ন পরিচয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। র্যাব সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে জেএমবির ওই ঘটনায় দেশের ৬৩ জেলায় ১৬১টি মামলা হয়। আসামি করা হয় ৬৬০ জনকে। এর মধ্যে ৪৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে ১০২টি মামলার। তার মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২৪৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ১১৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এর মধ্যে পলাতক রয়েছে ৫০ জন। জামিনে রয়েছে ৩৫ জন। জঙ্গিদের ওই সিরিজ বোমা হামলার ৫৯টি মামলা এখনও বিচারাধীন। অনেক মামলায় সাক্ষীদের না পাওয়ার কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। বেশিরভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করে আসছে। তারপরও জঙ্গিদের যাতে কঠোর সাজা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ওই মামলার পলাতক ও জামিনে মুক্তি পাওয়া অনেকে ফের জঙ্গি তত্পতা চালিয়ে যাচ্ছে গোপনে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাজা পাওয়া আসামি রাসেল, আবদুল কাফি, এমএ সিদ্দিক বাবলু, রানা ওরফে আবদুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আবদুর রউফ এবং রায়হান ওরফে উবায়েদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির তখনকার শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাতশ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক রয়েছে। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই ৬ জঙ্গির পরে এই মামলায় আর কারও ফাঁসি কার্যকর হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সকালের খবরকে জানান, ৬৩ জেলায় একযোগে জঙ্গিদের বোমা হামলার ঘটনার পর অধিকাংশ আসামিরা গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিচারও হয়েছে। অনেকের বিচার কার্যক্রমও চলমান। জঙ্গি পুরোপুরি নির্মূল না হলেও এবং বর্তমানে তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করছে। বড় কোনো নাশকতার হুমকি রয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কীভাবে দেশ থেকে জঙ্গিদের নির্মূল করার চেষ্টা চালাচ্ছি তা সবাই দেখতে পারছেন। জঙ্গিদের কাজই নাশকতার সৃষ্টি করা। জঙ্গি নির্মূলের জন্য এখন সবাই সচেতন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আলেম ও সর্বস্তরের লোকজন জঙ্গিদের নির্মূলে তত্পর।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT