শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ২ বছর
প্রকাশ: ০৮:৩০ am ০১-০৭-২০১৮ হালনাগাদ: ১১:০০ am ০১-০৭-২০১৮
 
 
 


২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। এতে দেশি-বিদেশি নাগরিক ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৩ জন নিহত হন। হামলার দুই বছরে মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

এরই মধ্যে এই হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি। তদন্তে আলোচিত এই হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২১ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে সিটিটিসি। এদের মধ্যে ঘটনার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত পাঁচ হামলাকারী ছাড়াও আরও আট জন মারা গেছে সিটিটিসি ও র‌্যাবের অন্যান্য অপারেশনে। গ্রেফতার হওয়া ছয় আসামি ইতোমধ্যে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। দুই জনকে পলাতক দেখিয়ে চার্জশিট প্রস্তুত করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘হামলা ছিল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে ষড়যন্ত্রের ব্যাপকতা এমন ছিল যে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেকেই জড়িত। যারা চিহ্নিত হয়েছে, কে কোন দায়িত্ব পালন করেছে, ফিজিক্যাল এভিডেন্স, কেমিক্যাল রিপোর্ট, বিশেষজ্ঞদের মতামত, সব কিছুর কারণে তদন্ত একটু সময় লেগেছে। তবে তদন্তের মাধ্যমে এগুলোর সত্যতা মিলেছে।’

শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলার আসামি করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাসনাত করিমকে মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা হবে কি না- সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এতটুকু বলতে পারি নিরাপরাধ কাউকে জড়ানো হবে না।’

মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিসহ ২২ জন জড়িত। এর মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি ১৩ জঙ্গি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে। আর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে সাত জঙ্গি। এরা হলো রাকিবুল হাসান রিগ্যান, পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী, হাদিসুর রহমান সাগর, অস্ত্র সরবরাহকারী মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, পৃষ্ঠপোষক আকরাম হোসেন নীলয়, সংগঠক সোহেল মাহফুজ ও রাশেদুল ইসলাম র‌্যাশ। আর দুই জঙ্গি দেশের বাইরে আত্মগোপনে আছে। এরা হামলার সামরিক কমান্ডার শরিফুল ইসলাম খালিদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। তাদের পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’ এ হামলা করে। হামলা পরিচালনা করে তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের আদলে ঘোষণা দেয়। তারা ‘হোম গ্রোন’ জঙ্গি। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে হামলাকারীরা ভার্চুয়াল জগতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোকে অনুসরণ করতো। কানাডা প্রবাসী তাহমিদ হাসিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। তাকে এই মামলার আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। প্যারা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে নিহত হলি আর্টিজানের শেফ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসিব খান, তার বান্ধবী ফাইরুজ মালিহা, তাহানা তাসমিয়া, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফ্যাকাল্টির প্রাক্তন শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজাউল করিমের স্ত্রী শারমিনা করিম, ভারতীয় নাগরিক সাত প্রকাশ, জাপানি নাগরিকের গাড়ি চালক আব্দুর রাজ্জাক রানা, হলি আর্টিজানের নিরাপত্তা কর্মী জসিম,  বেকারীর কর্মচারী শাহরিয়ার, সহকারী কুক আকাশ খান, ওয়েটার লাজারুস সরেন, সুমন রেজা, সবুজ, শিশির, সুহিন ও সমীর বাড়ৈ প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। যা অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নব্য জেএমবির পাঁচজন ‘ইসাবা’ (হামলাকারী) বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সামরিক কমান্ডার শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদকে। ঢাকার সামরিক কমান্ডার আবু রায়হান ওরফে তারেক তিনজনের নাম দেয়। তারা হলেন রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম ও মীর সামীহ  মোবাশ্বের। আর উত্তরবঙ্গের কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী দেয় শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে বিকাশ ও খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে বাঁধনের নাম। রাজীব গান্ধী দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের শরিফুল ইসলাম ওরফে ডনের নামও দিয়েছিলেন, যাকে গুলশান হামলায় না পাঠিয়ে শোলাকিয়ার হামলায় পাঠানো হয়েছিল। ইসাবা দলের ছয়জন সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য বাড়ি ছেড়েছিল।

তাদের প্রথমে ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা ও পাবনার জঙ্গি আস্তানায় রাখা হয়েছিল। এরপর নিবরাসসহ কয়েকজনকে ঝিনাইদহে নিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ঢাকায় এনে বুড়িগঙ্গায় গ্রেনেড ছোঁড়া শেখানো হয়। ২০১৬ সালের মে মাসের শুরুতে জঙ্গিদের নেওয়া হয় গাইবান্ধার যমুনার চরে। পাঁচজনকে ২৮ দিন প্রশিক্ষণ দেয় মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, তামিম, মারজান, রিগ্যান, খালেদ, রিপন, রাজীব গান্ধী ও মানিক।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নয়জন ইটালির নাগরিক, সাতজন জাপানি নাগরিক, একজন ভারতের নাগরিক, তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক ও দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৩ জন নিহত হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর অপরাশেন থান্ডার বোল্ড অভিযানে পাঁচজঙ্গি নিহত হয়।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT