শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
নারীদের অজানা উদ্ভাবনগুলো
প্রকাশ: ১২:০০ am ০৭-১২-২০১৬ হালনাগাদ: ১১:০০ am ০৭-১২-২০১৬
 
 
 


ইতিহাসের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের কথা এলেই আমাদের আইনস্টাইন, এডিসনের মতো পুরুষ বিজ্ঞানীদের কথাই মনে পড়ে। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও অবদান রয়েছে। আমরা অনেকেই নারী বিজ্ঞানী এবং তাদের উদ্ভাবন সম্পর্কে জানি না। 

সভ্যতার পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক নারী বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে। প্রখ্যাত কয়েকজন নারী বিজ্ঞানীদের কয়েকটি উদ্ভাবন-

ক্যাথরিন বুর ব্লডগেট (নন-রিফ্লেকটিভ গ্লাস): যুক্তরাষ্ট্রের এই নারী বিজ্ঞানী ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রথম নারী। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের প্রথম নারী চাকরিজীবি। তার উদ্ভাবিত অ-প্রতিফলিত কাচ (নন-রিফ্লেকটিভ গ্লাস) ক্যামেরা এবং সিনেমা প্রজেক্টর লেন্স তৈরিতে সাহায্য করেছে এবং এখনো করছে। চশমা, গাড়ির উইন্ডশিল্ড এবং কম্পিউটার স্ক্রিন তৈরিতে নন-রিফ্লেকটিভ গ্লাস খুবই প্রয়োজনীয়। ক্যাথরিন ৮১ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

গ্রেস হপার (কম্পাইলার ও কোবোল প্রোগ্রামিং ভাষা): যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল এই নারী একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। তিনি হার্ভার্ড মার্ক ১ কম্পিউটার এর অন্যতম প্রোগ্রামার। কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর প্রথম কম্পাইলারের উন্নয়ন সাধন করেন। মেশিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে জনপ্রিয় করে তুলেন। যা আধুনিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোবোল এর সংস্করণে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে। সফটওয়্যার সিস্টেমের ক্রুটি ‘বাগ’ শব্দটি তিনি সর্বপ্রথম পরিচিত করেন এবং ত্রুটি সমাধানে ডিবাগিংকে জনপ্রিয় করেন। হপার ১৯৯২ সালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

মারিয়া টেলকস্ (সৌরশক্তি প্রযুক্তির বাড়ি): এই হাঙ্গেরীয় বিজ্ঞানী নারী স্থপতি এলানোর রেমন্ডের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় বিশ্বে সর্বপ্রথম সৌর-উত্তপ্ত বাড়ি উদ্ভাবন করেন। থার্মো ইলেকট্রনিক পাওয়ার জেনারেটর উদ্ভাবন করেন সৌর শক্তি ব্যবহার করে। ১৯৯৫ সালে ডিসেম্বর ৯৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শার্লি অ্যান জ্যাকসন (গুরুত্বপূর্ণ টেলিকমিউনিকেশন পণ্য): ১৯৭৩ সালে এমআইটি থেকে পিএচডি ডিগ্রিধারী প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী তিনি এবং টেলিকম গবেষণায় তার অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ নারী পদার্থবিদ। তার যেসব অবদান রয়েছে, সেসব ছাড়া প্রযুক্তিবিশ্ব ভাবা যায় না। যেমন পোর্টেবল ফ্যাক্স, টাচ টোন টেলিফোন, সোলার সেল, ফাইবার অপটিক ক্যাবল উদ্ভাবনসহ কলার আইডি এবং কল ওয়েটিংয়ের মতো প্রযুক্তিতে তার অবদান রয়েছে।

উপর: মারিয়া টেলকস্, ক্যাথরিন বুর ব্লডগেট (ডানে), নিচে: শার্লি অ্যান জ্যাকসন, গ্রেস হপার (ডানে)

উপর: মারিয়া টেলকস্, ক্যাথরিন বুর ব্লডগেট (ডানে), নিচে: শার্লি অ্যান জ্যাকসন, গ্রেস হপার (ডানে)

মার্গারেট নাইট (স্কয়ার-বটম পেপার ব্যাগ মেশিন): উনিশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত নারী উদ্ভাবক হিসেবে খ্যাত তিনি। পেপার ব্যাগের ক্ষেত্রে নিচের অংশে বর্গাকার ডিজাইনের পেপার ব্যাগ মেশিন তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে তিনি কাগজ কাটা, ভাঁজ করা এবং আঠা লাগানোর উপযুক্ত মেশিন উদ্ভাবন করেন। ৭৪ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এ নারী উদ্ভাবক মৃত্যবরণ করেন।

মারি ক্যুরি (তেজস্ক্রিয়তা): আমরা অনেকেই তাকে জানি তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কারক হিসেবে। কিন্তু পাশাপাশি তিনি পেলোনিয়ামেরও আবিষ্কার। সেই প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী যে বিজ্ঞানের দুইটি ভিন্ন শাখায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জেতেন। পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পান তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার জন্য। আর রসায়নে নোবেল পান পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য। ফরাসি এ নারী বিজ্ঞানী ১৯৩৪ সালে ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন (ডিএনএ ডাবল হেলিক্স): আমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করেন যে, ডিএনএ মডেলের একমাত্র অবদানকারী ওয়াটসন এবং ক্রিক, তাদের সময় হয়েছে ইতিহাস ঘেটে দেখার। কারণ এটা আসলে সেই নারীর অবদান, যিনি সেই ইতিহাসটা তৈরি করেছিলেন। রোসালিন্ড এমন এক পদ্ধতি বের করেন যাতে সর্বপ্রথম ডিএনএ এর ছবি তোলা সম্ভব হয়। এই ছবির নাম ফটো ৫১ আর এর ওপরে ভিত্তি করেই ওয়াটসন এবং ক্রিকের থিসিস দাঁড়িয়ে যায়। যুক্তরাজ্যের এই নারী রসায়বিদ ও এক্সরে ক্রিসটোলোগ্রাফার বিশ্বে সর্বপ্রথম ডিএনএ, আরএনএ, ভাইরাস, কয়লা, গ্রাফাইটের আণবিক কাঠামো বোঝাতে অবদান রাখেন। ডিএনএর কাঠামো আবিষ্কারের জন্য আজও আলোচিত তিনি। ১৯৫৮ সালে ৩৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

স্টেফানি কোলেক (কেভলার): যুক্তরাষ্ট্রের এই নারী রসায়বিদ কেভলার নামক এক ধরনের সিনথেটিক ফাইভার উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর ব্যবহার রয়েছে। গাড়ির টায়ারে ব্যবহারের জন্য তিনি কেভলার আবিষ্কার করলেও পরে তা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা বর্মের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়। আধুনিককালের হালকা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট তারই আবিষ্কারের ফল। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াও পরবর্তীতে বিমান, মোবাইল ফোন, নৌকাসহ বিভিন্ন জিনিসে কেভলার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ওলেক ৯০ বছর বয়সে ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

আন্না কনেলি (ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি): ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি বিল্ডিংয়ের বাইরে থাকে। বিল্ডিংয়ে আগুণ লাগলে অভ্যন্তরীণ সিঁড়ির পরিবর্তে এই সিঁড়ি ব্যবহার করে জীবন রক্ষা করা যায়। এই ফায়ার এক্সিট সিঁড়ির উদ্ভাবক যুক্তরাষ্ট্রের নারী আন্না কনেলি। ১৮৯৭ সালে তিনি ফায়ার এক্সিট সিঁড়ির প্যাটেন্ট করেন।

ন্যান্সি জনসন (আইসক্রিম বানানোর যন্ত্র): আইসক্রিম তৈরির প্রথম যন্ত্র উদ্ভাবন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যান্সি জনসন। ১৮৪৩ সালে তিনি তার উদ্ভাবিত আইসক্রিম তৈরি যন্ত্রটির প্যাটেন্ট করেন। ১৮৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন ন্যান্সি জনসন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT