শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
অসাধারণের সাহসিকতা
প্রকাশ: ১১:৩৯ am ০৯-০৯-২০১৮ হালনাগাদ: ০৩:১১ pm ০৯-০৯-২০১৮
 
 
 


পাইকপাড়া গ্রামটি ছবির মতো। অনেকে আবার আদর করে বলেন চলনবিলের সখী। গ্রামের সামনেই বিস্তৃত চলনবিল। এই বিল ধরে ভ্রমণপিয়াসী মানুষের আনাগোনা দেখা যায় প্রায়ই। সেদিনও একদল মানুষ নৌকায় ঘুরতে এসেছিলেন। বিলের সৌন্দর্য উপভোগে মগ্ন যাত্রীরা নৌকার ছইয়ে উঠে ছবি তুলছিলেন, মেতেছিলেন হাসি-আনন্দে।

১৩ বছরের সুমন হোসেনও আনন্দের ভাগী হয়েছিল সেদিন। কিছুটা দূরত্ব রেখে নিজের ডিঙি বেয়ে সঙ্গ নিয়েছিল সুমন। বিকেলটা ভালোই কাটছিল তার। সুমনের বর্ণনায় ফিরে এল সেই ক্ষণ। আমাদের চোখেও ভেসে উঠল পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রাম।

৩১ আগস্ট। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। দিনের শেষ আলোয় দলেবলে ছবি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নৌকার আরোহীরা। কাছাকাছি একটি ডিঙিতে বসে তা দেখছিল সুমন। নৌকার যাত্রীরা একে একে ছইয়ের ওপর ওঠেন সেলফি তুলতে। সবাই ওপরে এক পাশে উঠলে হেলে যায় নৌকাটি। হুড়মুড় করে ভেঙে যায় ছই। মুহূর্তেই ডুবতে শুরু করে নৌকা।

সুমন ছুটল নৌকা নিয়ে
ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেল সুমন। সে দেখছিল অনেকে সাঁতার কাটার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। সাহায্যের জন্য ডাকছে তাকে। বয়সের তুলনায় সাহসী হলেও ডুবতে বসা মানুষের বাঁচার আকুতি আর আর্তচিৎকারে বালক সুমনের মনে ভয় ধরিয়ে দিল। কিন্তু সে ভয় স্থায়ী হয়নি। মুহূর্তেই সাহস সঞ্চার হলো। সুমন ছুটে গেল দুর্ঘটনায় পড়া নৌকার পানে। আনন্দোচ্ছ্বাস কীভাবে বিষাদে ভরে ওঠে, তার নীরব সাক্ষী হলো সুমন।

শাহনাজ শুনছিলেন চিৎকার
বিল থেকে হাঁসগুলো বাড়ি ফিরেছে। শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে বাড়ির উঠানে তখন হাঁসদের খাবার দিচ্ছিলেন গৃহিণী শাহনাজ পারভীন। ৩৫ বছর বয়সী শাহনাজের হঠাৎ কানে এল ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার। বিলের দিকে তাকিয়ে দেখেন দুর্ঘটনার দৃশ্য। ছই ভেঙে ডুবে যাচ্ছিল নৌকা। বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন অনেকে। বাড়ির পাশেই পাড়ে বাঁধা নৌকা নিয়ে নেমে পড়েন শাহনাজ। ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থলে।

বাঁচল ১৭ প্রাণ
সুমন ও শাহনাজ প্রায় একই সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান। দেখলেন সাঁতার না জানা মানুষেরা বাঁচার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শাহনাজ তাঁর ডিঙিতে দুজন তোলার পরই নৌকাটি টলতে শুরু করল। তিনি বলছিলেন, ‘বুঝতে পারছিলাম, দেরি হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। মানুষগুলোকে একসঙ্গে নিতে গেলে আর বাঁচানো যাবে না।’ সুমনের নৌকাটি শাহনাজের নৌকার তুলনায় খানিকটা বড় হলেও পাঁচজনের বেশি নেওয়া যাবে না। কিন্তু সবাইকে তো পাড়ে নিতে হবে।

বুদ্ধিটা এল সুমনের মাথায়। সবাইকে যেহেতু নৌকায় তোলার কায়দা নেই, তাই সে বলল, পানিতে ভেসে নৌকা ধরে রাখতে। এভাবেই কৌশল খাটিয়ে ১৭ যাত্রীকে উদ্ধার করলেন সুমন ও শাহনাজ পারভীন।

 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT