সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
কক্সবাজারে পাহাড় ধসে ভাইবোনসহ চারজন মারা গেছে
প্রকাশ: ০৮:৩০ am ২৬-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:৩৯ pm ২৬-০৭-২০১৭
 
 
 


কক্সবাজার জেলার দুই স্থানে ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে ভাইবোনসহ চারজন মারা গেছে। আহত হয়েছে আরও চারজন। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা শহরের লাইট হাউসপাড়ায় পাহাড় ধসে মারা গেছে দুজন। তারা হলেন-সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নের মামুনপাড়া গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মোহাম্মদ শাহেদ (১৮) ও পিএমখালী ইউনিয়নের এরশাদুল্লার পুত্র সাদ্দাম হোসেন (২৮)। মোহাম্মদ শাহেদ ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত অবস্থায় একই কক্ষে থাকা সাদ্দাম হোসেন ও তার ছোট ভাই আরাফাত উদ্দীন নয়ন (৩০) এবং রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেনকে (২৫) উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় সাদ্দাম হোসেন মারা যান। এ ছাড়াও রাত দেড়টার দিকে জেলার রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের কাইম্যার ঘোনা এলাকায় ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায় চার বছরের জিহান ও তিন বছরের সায়মা। তারা সম্পর্কে ভাইবোন এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের বাবা জিয়াউর রহমান (৩৫) ও মা আনারকলি বেগম (২৭)। তাদের কক্সবাজারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার পাহাড় ধসে হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে কথা হয় নিহত সাদ্দাম হোসেনের ছোট ভাই মোতাহেরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, তার ভাই সাদ্দাম হোসেন ও আরাফাত উদ্দীন নয়ন হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের কর্মচারী। তারাসহ মোট চারজন পাহাড়ের একতলা দালানটির একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন। রাতে আকস্মিকভাবে একতলা বাড়িটির ওপর পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। পাহাড় ধসে ভাই সাদ্দাম মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি পিএমখালী থেকে মা দিলদার বেগমকে নিয়ে ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। এখন আহত অবস্থায় চিকিত্সাধীন আরাফাত উদ্দীন নয়নের দেখাশোনা করছেন তিনি। ছেলে মোতাহেরুলের সঙ্গে কথা বলার সময় দিলদার বেগম বিলাপ করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। তার বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতাল আঙ্গিনা। এ সময় কাছের স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ‘পাহাড় ধসে যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেই লাইট হাউস এলাকার পাহাড়ে অন্তত দুই হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। সেখানে যারা পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে এবং এখনও যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পাহাড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশের নিধনযজ্ঞ থামছে না।’ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুর রউফ তালুকদার জানিয়েছেন, পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে নিহত চারজনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আহত চারজনের পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা। মো. আবদুর রউফ তালুকদার আরও জানান, পাহাড়ের চূড়ায় ও পাদদেশে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে পাহাড় থেকে অনেক বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। সর্বত্র মাইকিং করা হচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সময় পাহাড়ের লোকজন যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করতে কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয় ও কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি বিদ্যালয় ভবন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত খাবারও মজুদ রাখা হয়েছে। যারা ওখানে আশ্রয় নেবে তাদের সবার খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার জানিয়েছেন, পাহাড় ধসের ঘটনাগুলো তদারকির জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। তিনি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কক্সবাজার শহরের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে তিনটি টিম কাজ করছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত সোমবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT