বুধবার, ২২ মে ২০২৪ ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
না.গঞ্জ শামীম ওসমান ও আইভী সমর্থকদের সংঘর্ষ: মেয়র আইভীসহ আহত ৩০
প্রকাশ: ১২:০০ am ১৭-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ০৯:৫৫ am ১৭-০১-২০১৮
 
 
 


হকার বসানো ও উচ্ছেদ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী পন্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ওই সংঘর্ষের কারণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে মেয়র আইভী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শহরের সভাপতি জুয়েল হোসেনসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

ওই সময়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের সময়ে শামীম ওসমান এবং আইভী দুজনই সড়কে ছিলেন।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে গত কয়েকদিন ধরেই এমপি শামীম ওসমান ও আইভী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। সবশেষ সোমবার বিকেলে সমাবেশ করেন শামীম ওসমান। তিনি ঘোষণা দেন, হকারদের পুনর্বাসনের আগে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকার বসবে। কিন্তু একই সময়ে আইভী বলেন, “কোনোভাবেই হকার বসতে দেয়া হবে না।”

ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে নগর ভবনের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ে অবস্থান নেন মেয়র আইভী। ওখান থেকে অনুগামী নেতা-কর্মীদের নিয়ে আইভী মিছিল নিয়ে ফুটপাতের ওপর দিয়ে চাষাঢ়ার দিকে আসতে থাকেন।

অপরদিকে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে হকারদের কয়েকটি গ্রুপ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে ৫টায় আইভীর নেতৃত্বে মিছিল চাষাঢ়া সায়াম প্লাজার সামনে আসে। সেখানে কয়েকজন হকারকে ফুটপাত থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এছাড়া আইভীর মিছিলটি পুলিশ আটকে দেয়। তখন বাধা উপেক্ষা করে মিছিল সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইল পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। ওই সময়ে একজন হকারকে মারধর করা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন শামীম ওসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চাষাঢ়া এলাকার নিয়াজুল সেখানে গেলে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন গেলে তাকেও মারধর করা হয়। এ খবর চাষাঢ়ায় ছড়িয়ে গেলে সেখানে থাকা আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনুসহ অন্যরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের পক্ষে হকাররাও অবস্থান নেন। ওই সময়ে আইভীকে সায়াম প্লাজার সামনে লোকজন ব্যারিকেড দিয়ে রক্ষা করেন। তখন আইভী পায়ে আঘাত পান। পরে লোকজন এসে আইভীকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময়ে উভয় পক্ষের লোকজন একে অন্যকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুরো শহরে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু শহরে যান চলাচল ও আশেপাশের সকল দোকানপাট।

এদিকে বিকেল ৫টায় চাষাঢ়া গোলচত্বর এলাকাতে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের লোকজনদের পুলিশ ধাওয়া করলে বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে রাইফেল ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসেন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তখন পুলিশ সরে গেলে শামীম ওসমান লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ায় হক প্লাজার সামনে অবস্থান নেন। তখন হকার ও লোকজন ঘটনা নিয়ে শামীম ওসমানকে একের পর এক নালিশ দিতে থাকে।

শামীম ওসমান তখন বলেন, “আমি এর বিচার আল্লাহকে দিব। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আমাদের প্রচুর লোকজনদের মেরে আহত করা হয়েছে। আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেই নাই।”

এদিকে, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইভী বলেন, “আমি কারো কাছে সাহায্য চেয়ে পাইনি। আমি ডিসি ও এসপির প্রত্যাহার চাইছি। আমরা শান্ত নারায়ণগঞ্জ চাই।”

আইভী বলেন, “আমি শান্তিপূর্ণভাবে লোকজনদের নিয়ে ফুটপাত দিয়ে চাষাঢ়া আসছি। কিন্তু সেখানে বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। নিরীহ লোকজনদের মারধর করা হয়েছে। শামীম ওসমান রাইফেল ক্লাবে থেকে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। তার লোকজন একের পর এক গুলি করেছে।”

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, “আহত ৩০ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ থেকে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরফুদ্দিন বলেন, “মেয়র সমর্থকদের সঙ্গে হকারদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। তবে কয় জন আহত হয়েছে জানা নেই। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।”

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT