শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয় কম হয়েছে
প্রকাশ: ১২:৪২ pm ১৬-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:৫২ pm ১৬-০৭-২০১৭
 
 
 


রফতানি বাণিজ্যে ৮০ শতাংশ আয় আসে তৈরি পোশাক থেকে। কোনো কারণে প্রধান এই রফতানি পণ্যে আয় কমলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি আয়ে। ঠিক এই অবস্থা দেখা দিয়েছে সদ্য বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। তৈরি পোশাক রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় মোট রফতানিতে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি আয় কম হয়েছে। আর পোশাক রফতানিতে আয় কম হয়েছে প্রধান প্রধান বাজারে আশঙ্কাজনক হারে আয় কম হওয়ায়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। প্রধান বাজারগুলোতে পোশাক রফতানি কমার কারণ সম্পর্কে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে পোশাক রফতানি কমছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমার কারণ হচ্ছে সে দেশে ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি বেড়েছে। তাদের রফতানি বাড়ায় আমাদের রফতানি কমেছে। অবশ্য দেশটির নতুন সরকার টিপিপি চুক্তি বাতিল করায় আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন আমাদের পোশাক রফতানি বাড়বে। ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানি কমার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ইউরোর বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় ইউরোপে কমছে পোশাক রফতানি। তিনি বলেন, ডলার ও ইউরোর বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ার কারণেও ভুগতে হচ্ছে রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের। এক বছর আগে এক ইউরো আয় করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় রফতানিকারক পেতেন ১০৬ টাকা। এখন পাচ্ছেন ৮৮ টাকা। এ হিসাবে ২০ শতাংশ আয় কম করছেন বাংলাদেশি রফতানিকারকরা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি আগের বছরের চেয়ে কমেছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রফতানি হয় ৫৬২ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ডলারের। আর বিদায়ী অর্থবছরে হয়েছে ৫২০ কোটি ৪০ লাখ ১০ হাজার ডলারের। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় কমেছে ৪২ কোটি ৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের। একইভাবে যুক্তরাজ্যের বাজারে আগের অর্থবছরের চেয়ে তৈরি পোশাক রফতানিতে আয় কমেছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশটিতে পোশাক রফতানিতে আয় হয় ৩৫২ কোটি ডলারের। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয় ৩৩০ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। অর্থাত্ আয় কমেছে ২১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আরেক প্রধান বাজার কানাডায় পোশাক রফতানি কমেছে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ। আগের অর্থবছরে যেখানে দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি ছিল ৯৯ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের। বিদায়ী অর্থবছরে রফতানি হয় ৯৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। আগের বছরের চেয়ে কানাডায় আয় কমেছে ৫ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ইউরোপের আরেক প্রধান বাজার বেলজিয়াম। দেশটিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রফতানি হয় ৮৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। আর গত অর্থবছরে রফতানি হয় ৭৫ কোটি ৩১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের। আগের অর্থবছরের চেয়ে বিদায়ী অর্থবছরে বেলজিয়ামে আয় কমেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলার বা ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ইউরোপের আরেক বাজার আয়ারল্যান্ডে পোশাক রফতানি কমেছে ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। দেশটিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পোশাক রফতানিতে আয় হয় ২০ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। বিদায়ী বছরে হয়েছে ১৫ কোটি ৭২ লাখ ২০ হাজার ডলারের। অর্থাত্ আগের বছরের চেয়ে রফতানি আয় কম হয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ডলারের। এ ছাড়া ইউরোপের আরও কয়েকটি বাজারে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে। এসব দেশে রফতানির পরিমাণ কম হলেও আগের বছরের চেয়ে রফতানি আয় কমার হার অনেক বেশি। যেমন-চেক রিপাবলিকে আগের বছরের চেয়ে আয় কমেছে ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, সাইপ্রাসে কমেছে ১২ শতাংশ, মালটায় কমেছে ৫২ দশমিক ৮৪ শতাংশ, লাটভিয়ায় কমেছে ৫৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রধান বাজারগুলোতে পোশাক শিল্পের আয় কমার বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন  বলেন, প্রধান বাজারগুলোতে আয় কমা পোশাক শিল্পের জন্য ভালো ইঙ্গিত নয়। পোশাকে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকলেও আমি মনে করি প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের পোশাক খাত সক্ষমতায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এ জন্য প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান যেখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় করছে এবং ওইসব দেশের প্রবৃদ্ধি যেখানে ১০-এর ওপরে, সেখানে বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ করতেই পারছে না, উল্টো প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়েও কমছে।

বিষয়গুলো নিয়ে উদ্যোক্তা ও সরকারকে ভাবতে হবে।

  • যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ৭.৪৮ শতাংশ
  • যুক্তরাজ্যে কমেছে ৬.১৭ শতাংশ
  • কানাডায় কমেছে ৫.২২ শতাংশ
  • বেলজিয়ামে কমেছে ৯.৮৪ শতাংশ
  • আয়ারল্যান্ডে কমেছে ২২.০৭ শতাংশ
 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT