শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ২১শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায় : ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনের যাবজ্জীবন
প্রকাশ: ০৬:০০ am ২৭-১১-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৪৩ am ২৮-১১-২০১৭
 
 
 


পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাই কোর্ট।

এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির রায়ে ১৮৫ জনকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে; তিন থেকে দশ বছরের সাজা হয়েছে ২২৮ জনের।

সব মিলিয়ে অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন মোট ২৮৮ জন। অভিযুক্ত ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে বাকি ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সোমবার সর্বসম্মত এই রায় ঘোষণা করে। হাই কোর্টের বিশেষ এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ মামলায় হাই কোর্টের প্রায় দশ হাজার পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করা হয় দুই দিন ধরে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আট বছর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহের পেছনে ছিল ‘স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র’।

জজ আদালতের মত হাই কোর্টও বলেছে, ন্যায্যমূল্যে পণ্যবিক্রির মত কাজে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জড়ানো ঠিক নয়।

সেই সঙ্গে কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মধ্যে পেশাদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা,অধস্তনদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক মানসিকতার পরিবর্তন এবং তাদের কোনো ক্ষোভ থাকলে তার প্রশমনের তাগিদ এসেছে হাই কোর্টের রায়ে।

বিদ্রোহের আগে গোয়েন্দারা কেন তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল- তাও সরকারকে তদন্ত করে দেখার সুপারিশ করেছে হাই কোর্ট।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পরের মাসেই বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ঢাকার পিলখানায় বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানদের হাতে মারা যান ৫৭ সেনা কর্মকর্তা।

রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহে বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান। ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের বিদ্রোহ।

সেই ঘটনা পুরো বিশ্বে আলোড়ন তোলে। এক মামলায় এত আসামির সর্বোচ্চ সাজার আদেশও নজিরবিহীন।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের পর ৫৭টি বিদ্রোহের মামলার বিচার হয় বাহিনীর নিজস্ব আদালতে। সেখানে ছয় হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। পরে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলার বিচার শুরু হয় সাধারণ আদালতে।

ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে এ মামলার রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া ২৫৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে হাই কোর্ট সিদ্ধান্ত দিল।

হাই কোর্টের রায়

# জজ আদালতে মৃত্যদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জন জওয়ান ও নন কমিশন্ড কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে হাই কোর্ট খালাস দিয়েছে। সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়াদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

# জজ আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে, ১২ জন খালাস পেয়েছে এবং দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

# বিচারিক আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ২৫৬ জনের মধ্যে ২২৫ জনের ক্ষেত্রে আপিল হয়েছিল হাই কোর্টে। তাদের মধ্যে দুই জনের দুটি ধারায় মোট ১৩ বছর (১০+৩) করে,  ১৮২ জনের ১০ বছর, আটজনের সাত বছর, চারজনের তিন বছর কারাদণ্ড হয়েছে। হাই কোর্টে ২৯ জন খালাস পেয়েছেন। ২৮ জনের বিষয়ে আপিল না হওয়ায় তাদের আগের ক্ষেত্রে জজ আদালতের দেওয়া ৩ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রয়েছে। আর জজ আদালতে সাজা হওয়া তিনজন কারাগারে মারা গেছেন।  

# জজ আদালতে খালাস পাওয়া ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের বিষয়ে আপিল করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। হাই কোর্টের রায়ে তাদের মধ্যে ৩১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং চারজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আপিলের ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। যাদের বিষয়ে আপিল হয়নি, তাদের খালাসের রায়ই বহাল থাকছে। সব মিলিয়ে খালাস পাচ্ছেন মোট ২৮৮ জন।

হাই কোর্ট যাদের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে, তাদের মধ্যে পিলখানায় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া বিডিআরের উপ সহকারী পরিচালক তৌহিদুল আলমও রয়েছেন।

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীকে এ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল জজ আদালত। তাদের মধ্যে পিন্টু ২০১৫ সালে রাজশাহী কারাগারে মারা যান। আর তোরাব আলীকে হাই কোর্ট খালাস দিয়েছে।

ন্যায়বিচারের অন্বেষণ

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আজকে রায় যেভাবে ঘোষণা হয়েছে- সেভাবে রায় হতে পারে না। রাষ্ট্রপক্ষ যে রায় চেয়েছে, তারাও মনে হয় এ রকম প্রত্যাশা করে নাই।”

আপিল করবেন কী- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা দেখে তিনি তার মক্কেলদের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার পরামর্শ দেবেন।

রায়ে সন্তুষ্ট কী না- এ প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “রায় না দেখে বলতে পারব না। খুব বেশি খালাস হয়নি।”

আসামিপক্ষে এ মামলার শুনানিতে আরও ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল বাসেত মজুমদার, মহসীন রশীদ, এস এম শাহজাহান, এ এস এম আবদুল মুবিন, দাউদুর রহমান মিনা, শামীম সরদার ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম।

আর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, মোশাররফ হোসেন কাজল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোশাররফ হোসেন সরদার, শেখ বাহারুল ইসলাম ও জাহিদ সরওয়ার কাজল।

সরকারের তরফ থেকে কেউ এ রায় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হানিফ বলেছেন, “আজ এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন কোনো গোষ্ঠী এমন ঘটনা ঘটাতে না পারে- সেজন্য এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।"

রায়ে ফাঁসি থেকে খালাস পাওয়া সুবেদার আলী আকবরের স্ত্রী রেহানা আক্তার আনন্দ প্রকাশ করে বলেছেন, “ন্যায়বিচার পেয়েছি। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। তারপরও খুশি, এতদিনে রায় পক্ষে পেয়েছি।”

অন্যদিকে ফাঁসি বহাল থাকা সুবেদার মেজর জাকির হোসেন জামালের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে আদালত প্রাঙ্গণে কাঁদতে দেখা যায়।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, “মাগো, বাবা কইয়া কার কাছ যাইয়াম গো।”

সেদিন যা ঘটেছিল

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার পরপরই পিলখানা বিডিআর সদরদপ্তরে গুলির শব্দ পাওয়া যেতে থাকে। বিডিআর সপ্তাহ চলার কারণে প্রথমে অনেকেই ভাবছিলেন, কোনো কর্মসূচি চলছে। কিন্তু কিছু সময় পর জানা যায়- বিদ্রোহ হয়েছে; পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জওয়ানরা।

বিদ্রোহের পর সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এরই মধ্যে পিলখানার চারদিকে সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়।এদিকে পিলখানার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় বিডিআর দপ্তরে বিদ্রোহের খবর আসতে থাকে। 

এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে শুরু হয় আলোচনা। তৎকালীন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মীর্জা আজম ও সাংসদ ফজলে নূর তাপস এ আলোচনার নেতৃত্ব দেন।

বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বিদ্রোহীদের আলোচনা হয়। পরে পিলখানার প্রধান ফটকের পাশের একটি রেস্তোরাঁয় আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন।

গভীর রাতে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পিলখানায় গেলে বিদ্রোহীরা তার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিয়ে আসার সময় বিদ্রোহীদের হাতে জিম্মি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। তারা মুক্ত হন।

কিন্তু এরপরও পিলখানা বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে পিলখানা শূন্য হয়ে পড়লে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবসান ঘটে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার বিদ্রোহের।

বিদ্রোহের প্রথম দিন দুপুরে কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের কাছে ম্যানহোলের মুখে দুই বিডিআর কর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেলে হৈ চৈ পড়ে যায়। বোঝা যায়, ভেতরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

বিদ্রোহ অবসানের পরদিন পিলখানায় পাওয়া যায় একাধিক গণকবর। সেখানে পাওয়া যায় বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, তার স্ত্রীসহ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুনর্গঠন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।

‘বদলাতে হবে ঔপনিবেশিক মানসিকতা’

এ মামলার রায় ঘোষণার প্রথম দিন রোববার বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। সোমবার নিজের পর্যবেক্ষণ পড়েন বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক শওকত হোসেনও সংক্ষিপ্ত আকারে তার পর্যবেক্ষণ বলেন। পরে বেলা আড়াইটায় শুরু হয় মূল রায় (আদেশের অংশ) ঘোষণা।

বিচারপতি জাফর সিদ্দিকী তার পর্যবেক্ষণে বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পূর্বাপর আলোচনা ও পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এ ঘটনা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা।”

তিনি বলেন, বিডিআরের জওয়ানরা ‘দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়াসহ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের উপর প্রত্যক্ষ হুমকির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে’ যে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে, সেই কলঙ্কের চিহ্ন তাদের বহুকাল বহন করতে হবে।

ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান ২০১৩ সালে তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের পেছনে অর্থনৈতিক ‘মোটিভ’ ছিল। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ‘মোটিভও’ থাকতে পারে।

ওই বিদ্রোহের তথ্য আগে জানতে না পারার ঘটনায় ‘গোয়েন্দা দুর্বলতা’ ছিল বলেও জজ আদালতের মনে হয়েছিল।

একই ধরনের পর্যবেক্ষণ এসেছে হাই কোর্ট বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের কাছ থেকে। কয়েক দফা সুপারিশ ও মতামতও তুলে ধরেছেন তিনি।

সেখানে বলা হয়েছে, ডালভাত কর্মসূচির মত উদ্যোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নেওয়া উচিৎ নয়। যে কোনো বাহিনীতে অধস্তনদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতনদের পেশাদারিত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিৎ।

পিলখানায় বিদ্রোহের আগে অধস্তনদের কিছু দাবিদাওয়া বিডিআরের ঊর্ধ্বতনদের কাছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। এ ধরনের আমলাতান্ত্রিকতা দূর করার তাগিদ দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বাহিনীতে যদি কোনো প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ থেকে থাকে, তা প্রশমন করা জরুরি। কারও বকেয়া পাওনা থাকলে তা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে।

সুপারিশে বলা হয়, বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী থাকার পরও কেন তারা বিদ্রোহের তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল- তা তদন্ত করে দেখতে হবে।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শওকত হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পারভীন জবার জবানবন্দি থেকে উদ্ধৃত করে সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণে বলেন, “ওই সাক্ষী বলেছেন, ‘এরা (বিদ্রোহী জওয়ান) মানুষ ছিল না। এদের আচরণ ছিল পশুর মত।  তারা যে সম্মিলিতভাবে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সাক্ষীর জবানবন্দিতেই ফুটে উঠেছে।”

আবার ১৯৮১ সালে রংপুর ডাক বাংলোয় নিজের দেখা একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচারপতি শওকত  হোসেন বলেন, “সেখানে আমি দেখেছি, একজন সৈনিক একজন সেনা কর্মকর্তার জুতা পরিষ্কার করে মোজা পরিয়ে দিচ্ছেন। …কেবল বাহিনীতে নয়, সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের ঔপনিবেশিক মানসিকতা বদলাতে হবে।”

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT