শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
বন্ড সুবিধা পেতে যাচ্ছে চামড়াজাত পণ্য
প্রকাশ: ০৫:৩৪ pm ২৩-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ০৫:৩৮ pm ২৩-০৭-২০১৭
 
 
 


বিশ্ববাজারে চামড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ এছাড়া বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। তবে দেশের রপ্তানি আয় মূলত এখনও পোশাক শিল্পনির্ভর। তাই এতে বৈচিত্র্য আনতে পণ্যভিত্তিক রপ্তানিকে উৎসাহ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর অংশ হিসেবে পোশাকের মতোই বন্ড সুবিধা পেতে যাচ্ছে চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্য।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্য ঘিরে যেসব পরিকল্পনা করা হয়েছে তার মধ্যে আছে ২০২১ সালের মধ্যে খাতটি থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য অর্জনে নীতিসহায়তা প্রদান। এছাড়া আছে সাভার থেকে রপ্তানিকৃত ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়ায় ন্যূনতম পাঁচ বছর ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান ও চামড়া খাতের পথনকশা তৈরি। পাশাপাশি স্প্লিট লেদারের এইচএস কোড সৃষ্টি ও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে চামড়াজাত পণ্যসংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানি কনসাইনমেন্ট অবমুক্ত করার কার্যক্রমও রয়েছে পরিকল্পনায়।

কর্মপরিকল্পনায় আরো আছে তৈরি পোশাকের মতোই দিনের বেলা চামড়াজাত পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান কারখানা থেকে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে (আইসিডি) চলাচল করতে দেওয়া। চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যকে অরেঞ্জ থেকে গ্রিন শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলা ও সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

পোশাক শিল্পের একটি কারখানায় বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামাল একই মালিকের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপিত অন্য কারখানায় ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য শিল্পের ক্ষেত্রে এ সুবিধা কার্যকর নয়। তাই চামড়া শিল্পকে পোশাক শিল্পের অনুরূপ বিদ্যমান বন্ড সুবিধায় কন্টিনিউশন অথবা এক্সটেনশনে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বন্ড সুবিধা বিদ্যমান আছে চামড়াজাত পাদুকা শিল্পে। তবে তা পোশাক খাতের অনুরূপ নয়। বর্তমানে তিন বছর মেয়াদি বন্ড সুবিধা থাকলেও তা সব শিল্পের জন্য নয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে চামড়া ও পাদুকাসহ চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে এটি তিন বছর মেয়াদি করা হবে।

এ বিষয়ে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্ষপণ্য ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে সরকার বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এখানে আমাদের একটি দাবি ছিল বন্ডসহ বিভিন্ন সুবিধা পোশাক শিল্পের অনুরূপ করা। এটিসহ বার্ষিক কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে খাতটি আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।

এ খাতে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। খাতটি নিয়ে গবেষণায় আমরা একটি সেন্টার অব এক্সিলেন্সও গঠন করেছি। বর্ষপণ্য ঘোষণা ও এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রহণ করা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাতটি আরো এগিয়ে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) জুলাই মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৯ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা, যা এই সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে এই খাতে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২২ কোটি মার্কিন ডলার।

বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি এখন জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রপ্তানি হয়৷ এছাড়াও চামড়ার তৈরি নানা ফ্যান্সি পণ্যেরও চাহিদা রয়েছে৷ দেশের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা৷ এর বাইরে জাপান, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়াতেও বাজার গড়ে উঠছে সাম্প্রতিক সময়ে৷

তবে বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জাপান৷ মোট রপ্তানি পণ্যের ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশই যায় জাপানের বাজারে৷ এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশি চামড়ার জুতার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই জাপান ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দিয়ে আসছে৷

বিশ্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার এখন ২১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের৷ বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের শতকরা শূন্য দশমিক ৫ ভাগ রপ্তানি করে৷ তবে এটা আরো বাড়াতে চায় বাংলাদেশ৷ ২০১৭ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার৷

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT