রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
প্রস্তাবিত ডিজিটাল সুরক্ষা আইন বাক-স্বাধীনতা হরণের নতুন পদক্ষেপ
প্রকাশ: ০৯:৩৯ am ০৯-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৫৩ am ০৯-০৮-২০১৭
 
 
 


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মতোই প্রস্তাবিত ডিজিটাল সুরক্ষা আইন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের সচেতন সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজে। নতুন ডিজিটাল সুরক্ষা আইনেও থাকছে জামিন অযোগ্য ধারা। এর পরিধিও বাড়ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় যে বিষয়গুলো ছিল, সেটিকে ডিজিটাল সুরক্ষা আইনে শুধু শব্দ আর ধারাগত পরিবর্তন এনে অপরাধযোগ্য হিসেবে করা হয়েছে। একে বাক-স্বাধীনতা হরণের নতুন পদক্ষেপ বলছেন আইনবিদরা।
আইসিটি আইনের ৯৫টি ধারার পরিবর্তে নতুন আইনে ৪৪টি ধারা হচ্ছে। কিন্তু নতুন আইনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অজামিনযোগ্য আরও পাঁচটি ধারা। যা আগের আইনের ক্ষেত্রে ছিল চারটি। নতুন আইনের পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। এতে বেআইনি প্রতিবন্ধকতা, সন্ত্রাসী সম্পদ, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি ও কাউন্সিল গঠন এবং এর প্রয়োগকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সরকার দেশের জন্য ক্ষতি হতে পারে এমন প্রচেষ্টা ঠেকাতে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গঠন করে তল্লাশি ও তদন্ত চালাতে পারবে। বাজেয়াপ্ত করতে পারবে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পদও। দেশে একটি মাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল (আদালত) আছে। যার এজলাস ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে স্থাপিত। এ ট্রাইব্যুনালে একজন জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক দায়িত্ব পালন করছেন।
affwk47-bdgm16_flash-sale_970x90BD-[C:G]
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে হওয়া ৭৪০টি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলা আছে ৫৭ ধারার। ২০১৩ সালে তিনটি মামলা ছিল। ২০১৪ সালে সারাদেশে ৩৩টি মামলা হলেও ২০১৫ সালে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫২। ২০১৬ সালে মামলার সংখ্যা ২৩৩টি। এ বছর জুলাই পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৩৯১টি। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাদের ৩১৩ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এসব আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাংবাদিক প্রবীর শিকদার, গোলাম মুজতবা, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক হবিগঞ্জের গোলাম মোস্তফা রফিক, সাংবাদিক সোহাগ দেওয়ান, চট্টগ্রামের তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকার নাজমুল হোসেন, খুলনার আবদুল লতিফ মোড়ল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক আফসান চৌধুরী।
affwk41-bdgm16_daraz-essentials_728x90BD-[C:G]
ইন্টারনেটে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সংঘটিত অপরাধের দমন, প্রতিরোধ ও বিচারের জন্য ২০০৬ সালের আইসিটি আইন ২০১৩ সালে সংশোধন করে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়। আইসিটির ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়া হয়, তা হবে একটি অপরাধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিজিটাল আইনের ১৯ ও ২০ ধারা আগের ৫৭ ধারার মতো। আইসিটি আইনে ৫৭ ধারার অপরাধের জন্য অনধিক ১৪ ও কমপক্ষে ৭ বছর কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড ছিল। নতুন ডিজিটাল আইনের খসড়ায় সর্বোচ্চ দুই বছর ও সর্বনিম্ন দুই মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নতুন আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন আগস্ট মাসে পাস হবে। তখন এ সমস্যা মিটে যাবে। এ বিষয়ে প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, আইসিটি আইন করা হয়েছিল মানুষ যেন নিরাপদে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আইসিটি আইনটি করার সময় প্রণয়নকারীরা অতি আবেগপ্রবণ হয়ে ধারাটিকে জামিন-অযোগ্য করেছেন। নতুন আইন যেন আগের ৫৭ ধারার মতো ধারাগুলো প্রত্যাহার করা হয়।
affwk47-bdgm16_flash-sale_970x90BD-[C:G]
বেসরকারি সংস্থা আর্টিকেল ১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক তাহমিনা রহমান বলেন, ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের ১৯ ও ২০ ধারা মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। এসব ধারা রাখা উচিত নয়। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ঘটনা যেন ঘটাতে না পারে সেজন্য নতুন ডিজিটাল সুরক্ষা আইন করা হচ্ছে। আর সাইবার জগত্টাকে নিরাপদ রাখাই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলোপ করে তার স্থলে নতুন আইনটিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা হবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৩৫টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ২২টি মামলা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এজন্য সাংবাদিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এর থেকে মুক্তি দরকার। আমরা কালো আইনের বিরুদ্ধে। নতুন আইনটি যেন কালো না হয়। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, নতুন আইনের যে খসড়াটা আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে আগের আইনে ৫৭ ধারায় যে কথাগুলো ছিল, ঘুরে-ফিরে সেই কথাগুলোই এসেছে। হয়তো দুয়েকটা কথা এদিক-ওদিক হয়েছে। তিনি বলেন, সবসময় ক্ষমতাসীন দল কালো আইন প্রয়োগ করে মজা পায়। এজন্য কালো আইন বাতিল হয় না। তাই ৫৭ ধারার মতো কালো বিষয় বহাল থাকবে। এদিকে নতুন আইনটি যেন মানুষের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করার হাতিয়ার না হয়, সেদিকে সরকারকে যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে সরকারপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম মনে করেন, ৫৭ ধারার অধিকাংশ মামলাই হয়রানিমূলক। তাই নতুন আইনে যেন কোনো ফাঁক-ফোকর না থাকে। যাতে মানুষ হয়রানিতে না পড়ে। দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদের মতে, ৫৭ ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়। এজন্য নতুনটি যেন সেরকম না হয় বলে মত দেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সহসভাপতি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলার বিবাদী আজমল হক হেলাল বলেন, আইন সমাজকে বিকশিত করে। আইন সমাজকে আতঙ্কিত করে না। যে আইন সমাজকে আতঙ্কিত করে, সে আইন সংস্কার করা হোক, পরিবর্তন, সংশোধন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজন অথবা যা কিছু করা হোক না কেন তাতে সমাজে আতঙ্ক থেকেই যাবে। সমাজে আতঙ্ক থাকলে সে সমাজ কখনই উন্নত হয় না। বরং সমাজ, রাষ্ট্র সবকিছু সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। আইন সবার জন্য সমান। আইনের ব্যবহারে ব্যত্যয় ঘটলে রাষ্ট্রযন্ত্র, আইন মেকার, আইনসভাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিস্বার্থ ও গদি রক্ষার্থে আইন নয়।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT