সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
জীবনের সব রহস্যই লুকায়িত একটা শব্দে... "অনিশ্চয়তা"...!
প্রকাশ: ০৪:৪১ pm ১৩-০৩-২০১৮ হালনাগাদ: ০৫:০৩ pm ১৩-০৩-২০১৮
 
 
 


চে রুদ্রঃ গতকাল নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৫১ জন মারা গেছেন... মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি বাংলাদেশের আকাশে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার ইতিহাসে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড়...! এটা নিয়ে যেহেতু সামাজিক ব্যাপক তোলপাড় হচ্ছে তাই এ ব্যাপারে কিছু কথা আছে...

এগুলো কাউকে উদ্দেশ্য করে না, সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত মতামত...

১. দূর্ঘটনার জন্য ইতিমধ্যেই একতরফা ইউএস বাংলাকে দোষারোপ করা হচ্ছে। যদিও এর পেছনে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ আছে যেমনঃ বিমানটি ১৭ বছরের পুরোনো, এ বিমানটিই ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সৈয়দপুরে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা হতে বেঁচে যায়...বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান পরপর তিনটা ফ্লাইট পরিচালনার পরও এক প্রকার জোর করে তাকে আবার নেপালের ফ্লাইটে পাঠানো হয়... এগুলো যেমন সত্য তেমনি কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারের সাথে যোগাযোগে ভুল বোঝাবুঝি ও সঠিক সময়ে নির্দেশ দিতে ব্যর্থতার প্রমাণও পাওয়া গেছে...যার কারণেই শেষ মুহুর্তে ২ নাম্বার থেকে ২০ নাম্বার রানওয়েতে ল্যান্ডিং করতে গিয়ে পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারান। কিন্তু পর্যাপ্ত তদন্ত ছাড়া এ ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার...! টিভিতে ন্যাট জিও এয়ার ইনভেস্টিগেশন আর ফেসবুকে টি.আর.পি. বাড়ানোর জন্য দেয়া মনগড়া খবর দেখে নিজেই গোয়েন্দা না হই... যারা খবর গুলো দিচ্ছেন তারা যেমন ঘটনাস্থলে নেই তেমনি তারা নিজেরাও এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নন...!

২. বাংলাদেশের আকাশপথ এখনো অন্য যেকোন যোগাযোগব্যবস্থার চেয়ে নিরাপদ... এবং আরো অনেক উন্নত দেশের চেয়েও... শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনায় গোটা সেক্টর নিয়ে আঙুল তোলার আগে ভাবা উচিৎ এরচেয়েও অনেক বেশি মানুষ প্রতিদিন বাংলাদেশের সড়কপথে বাস বা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে... এমনকি নৌপথে মৃত্যুর সংখ্যাও নেহাতি কম না...!

৩. অনেকেই ইউএস বাংলাকে বয়কট করার আহবান জানাচ্ছেন... এক্ষেত্রে আমার মত এটা কোন সমাধান না। মাথাব্যাথা তাই মাথা কেটে ফেলা কোন যুক্তির কথা না... তারচেয়ে বরং চেষ্টা করা উচিৎ উপযুক্ত তদন্তের পর কোন ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা পাওয়া গেলে তা দূর করে আরো মানোন্নয়ন করার সুযোগ দেয়া। মনে রাখা উচিৎ ইউএস বাংলা বা এরমতো অন্যান্য প্রাইভেট কোম্পানি গুলো ছিলো বলেই সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কম খরচ ও দ্রুত সময়ে যাতায়াত করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর, যান্ত্রিক ত্রুটি,নিম্নমানের সেবা বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের অজুহাতে যদি বয়কট করতেই হয় তাহলে সবার আগে "বাংলাদেশ বিমান"কেই করা যৌক্তিক না? কারণ ইউএস বাংলার চেয়ে শতগুণ বেশি ত্রুটিপূর্ণ বিমান চালিয়ে হাজারো অভিযোগ আছে বাংলাদেশ বিমানের বিরুদ্ধে...!

৪. ৫১ টি নয়... মাত্র একটি জীবনের মূল্যও পৃথিবীর কোন সম্পদে ভর্তুকি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না। এ ক্ষতি অপূরণীয়। তেমনি একটি কোম্পানি শুধু জীবনের জন্য না হলেও অন্তত তাদের মুনাফার দিকে খেয়াল রেখে সর্বোত্তম যাত্রীসেবা ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। কারণ, এটাই তাদের বিনিয়োগ থেকে ব্যবসা করার মূলধন। সুতরাং, এতগুলো জীবনহানির দায়ভার যেমন তাদের ওপর বর্তায় পাশাপাশি কোন কোম্পানিই চায় না তাদের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ও ভাবমূর্তি নিজেদের দোষে নষ্ট করতে।

৫. বেশ কয়েকজনকে দেখলাম বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনাকে বলছেন তারা বড়লোক তাই এতো মাতামাতি... দেশে প্রতিদিন শতশত মানুষ মারা যাচ্ছে তার খবর কেন আসে না... দেশের মানুষের খোঁজ আমি নিচ্ছি না এটা আমার ব্যর্থতা, পাশাপাশি এও মনে রাখা ভাল দেশে অহরহ সড়ক দূর্ঘটনার মৃত্যু দেখে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যার ফলে আমার আগ্রহ কাজ করে না এটা আমার মানসিকতার সমস্যা... আর বিমান দুর্ঘটনা প্রতিদিন হয় না যেখানে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বড় বিমান দূর্ঘটনা পাশাপাশি এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু, আর মিডিয়া সেই ইস্যু নিয়েই বেশি নিউজ করবে যেটা প্রচার করে তাদের লাভ বেশি...! তাই তারা জানে কিসে আমি লাফাবো, তারাও লাফানোর খবর দিচ্ছে, আমিও লাফাচ্ছি...! এটার সাথে ধনী গরীবের কোন সম্পর্ক নেই।

৬. দেশের সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবর গুলো প্রকাশ কম হচ্ছে কারণ এগুলো মিডিয়া কাভারেজ পাচ্ছে না। তাই মানুষের স্টাটাস আর ক্লাস কে দোষ না দিয়ে মিডিয়ার ফোকাসের ব্যাপারটা মাথায় রাখা দরকার। আর সাধারণের প্রতি সহানুভূতি যেমন মানবতার প্রশ্নে প্রশংসার দাবিদার তেমনি বিমানে নিহতদের প্রতি আমার একটু উদার দৃষ্টিভঙ্গিও কাম্য। আর, যারা ওই বিমানে ছিলেন তারা আহামরি কোন বড়লোক ছিলেন না, তাদের মধ্যে বেশকিছু শিক্ষার্থী সাথে অন্যান্যদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের, যারা হয়ত অনেক দিনের জমানো টাকা আর বহুকষ্টে পাওয়া ছুটিতে বিদেশে ঘুরার সাধ মেটাতে নিজেদের মত কিছু সময় কাঁটাতে যাচ্ছিলেন । আর নেপাল যাওয়ার জন্য আজকাল আহামরি বড়লোক হওয়া লাগে না, দেশের ভেতর কক্সবাজার যাওয়ার খরচ দিয়ে এখন শুধু নেপাল না, মালয়েশিয়া থাইল্যান্ডওও ঘুরে আসা যায়। আর, শুধু বিমানে উঠলেই বড়লোক হয়ে যায় না, এটা নির্ভর করে সময়, সুযোগ, সুবিধার ওপর... বাংলাদেশের লাখো প্রবাসী শ্রমিক যাদের আমি হয়ত "কামলা" বলে ডাকি তারাও দেশে ফিরতে বিমানেই আসে। আমি নিজেও কামলা দিতে বিমানেই অন্যদেশে যাই আবার কামলা দিয়ে বিমানেই দেশে আসি। আমি বড়লোক হয়ে যাইনি...!

৭. আমি শুধু লোক দেখানোর জন্য আর ট্রেন্ডস্ মেইনটেইন করার জন্য শোক প্রকাশ করছি। কারণ সবাই করছে, আমি না করলে খারাপ দেখায়। সে করা যেতেই পারে... কিন্তু মাগফেরাতের জন্য স্যোসাল মিডিয়া না। একটা স্টাটাস আর প্রোফাইল চেঞ্জ করতে যে সময় নষ্ট করছি সে সময়ে অন্তত দু রাকাত নফল নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া না করে এসব করে মাগফেরাত শব্দটার ওজন না কমাই। কারণ, আমি কাল এ ঘটনার খবর পড়ছি আর পরেই আবার আরেক বন্ধুর বিয়ের ছবি দেখছিলাম সাথে বন্ধুর গোপন অভিসারের রসালো গল্প শুনছিলাম।

৮. ইউএস বাংলা'র বিমান এক্সিডেন্ট করায় ইউএস বাংলা বা বিমানে চড়াই বন্ধ করে দেয়া হাস্যকর কারণ দেশে অনেক নামীদামী বাসও এক্সিডেন্ট করছে,(এমনকি কাল রাতেই গ্রীনলাইনের ডাবল ডেকার করেছে), তাহলে তাদের বাসেও চড়া বন্ধ করা দেয়া একই যুক্তিতে পরে... এমনকি রিক্সা,সিএনজি এমনকি হালের অটোরিকশাও অনেক এক্সিডেন্ট করছে... তাহলে এগুলোতেও চড়া বন্ধ করে দিতে হবে।

৯. দূর্ঘটনা মানে দূর্ঘটনাই... এজন্যই মৃত্যু গুলোকে মৃত্যু বলা হচ্ছে,হত্যা নয়।
সুতরাং বিধাতার লেখা নিয়তি অস্বীকার না করে মেনে নেয়াই ভাল।। এর পেছনে অতি উৎসাহী হয়ে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র বা কোন রাজনীতি না খোঁজাই ভাল।

মনে রাখা উচিৎ, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও এ সেক্টরকে সবচেয়ে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
অন্যান্য ইঞ্জিনের নিরাপত্তা ও ঝুঁকি নির্ণয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জোর দেয়া হয় বিমানের ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে... চেক,ডাবল চেক এর পর ক্রস চেক নিশ্চিত করতে কাজ করেন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী আর বিশেষজ্ঞরা....
তারপরও দুর্ঘটনা ঘটেই...
শুধু ইউএস বাংলাই না,পৃথিবীর নামকরা অনেক বিমান কোম্পানীরই এমন রেকর্ড আছে....!

এগুলো নিয়েই জীবন...!
কারণ, জীবনের সব রহস্যই লুকায়িত একটা শব্দে... "অনিশ্চয়তা"...!

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT