রবিবার, ১২ মে ২০২৪ ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
মাকে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছেন মাহি
প্রকাশ: ০৮:৩০ am ২৪-০৩-২০১৮ হালনাগাদ: ১১:১৮ am ২৪-০৩-২০১৮
 
 
 


তানজিব বিন সুলতান মাহি (১৪) স্তব্ধ, নির্বিকার। ১০ দিনের মধ্যে সে বাবা ও মাকে হারাল। নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিজ হাতে মা আফসানা খানমকে বাবার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করেছেন মাহি। এ সময় নিরবে তার দুই চোখের পানিতে বুকে ভেসে গেলেও মা-বাবা হারানোর শোকে মাহির মুখ দিয়ে কোনো কথাই আসেনি। মা-বাবা হারানোর যন্ত্রণা বুকে সইতে হচ্ছে ১৪ বছরের মাহিকে।

শুক্রবার আফসানার লাশ উত্তরার বাসায় নেওয়ার পর সেখানে ছুটে আসেন আত্মীয়-স্বজন আর প্রতিবেশীরা। সেখানে আবিদ-আফসানার একজন পারিবারিক বন্ধু বলেন, “আমার ছেলেটা মাহির সাথে পড়ে। এতটুকু ছেলে কীভাবে এত কষ্ট সহ্য করবে? বাবা-মার কত আদরের ছেলে ও। অথচ এখন বাবা-মাকে ছাড়াই থাকতে হবে।”

স্বামীর মৃত্যুর খবর আসার পর সপ্তাহ না কাটতেই স্ট্রোকের পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আফসানা। তখন থেকেই উত্তরায় নিজেদের বাসা ছেড়ে মিরপুরে নানা ও চাচার বাসায় ছিলেন মাহি।

সকালে মায়ের মৃত্যুর পর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে আনা হয় মাহিকে। সে সময় সেখানকার চিকিৎসক চাচা খুরশীদ আলমের কক্ষেই ছিলেন তিনি। দুপুরে মায়ের কফিনের সঙ্গে উত্তরার বাসায় আসেন মাহি।

উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ওই বাসায় আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে এসেছিলেন মাহির বন্ধু ও তাদের বাবা-মায়েরা। স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ সময় শোকাতুর মাহি একেবারেই নিশ্চুপ ছিলেন।

স্বজনরা জানিয়েছেন, কাঁদলে মাহির মন হালকা হতো। কিন্তু মায়ের মরদেহ দাফন পর্যন্ত একটুও কাঁদেনি। তবে জানাজার জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে শেষবার মায়ের মুখ দেখে মাহি। উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরে সেক্টরে গাউছুল আজম জামে মসজিদে জানাজাও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিল।

এরপর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে আফসানাকে দাফন করা হয়। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে তানজিব বিন সুলতান মাহিও সেখানে ছিল। তবে সারাক্ষণই ছিল স্তব্দ ও নির্বিকার, কারো সঙ্গে কোন কথা বলেনি।

স্বজনরা জানান, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর এখন মাহি তার চাচা খুরশিদ মাহমুদের কাছে থাকবেন। খুরশিদ মাহমুদ একজন চিকিৎসক। তিনি পরিবার নিয়ে পল্লবীতে থাকেন।

আফসানার চাচা ইয়াদ আলী বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে গেছে মাহি। ওকে আমরা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।

আবিদের ভাই ড. খুরশিদ মাহমুদ, আফসানার চাচা ইয়াদ আলী ও ফুফাতো ভাই খন্দকার রেজাউল করিম জানান, দুর্ঘটনার পর প্রথমে আবিদ জীবিত বলে খবর পান আফসানা। পরদিন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি চুপসে যান। সেভাবে কান্নাকাটি করেননি। ১৭ মার্চ তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এ ঘটনাও হয় ছেলে মাহির সামনে। মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল সে। সকালে উঠে দেখে মা নড়ছে না। পরে চিৎকার করে স্বজনদের ডাকে মাহি। আফসানাকে প্রথমে উত্তরার একটি হাসপাতালে এবং পরে জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালটির যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ‘দুই দিন ধরেই তাঁর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। ব্রেন, কিডনি, লিভার বিকল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৯টায় তিনি মারা যান।’

সেখানে দুই দফায় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকরা আশার কথা বলেননি শুরু থেকেই। গত ১৯ মার্চ সংকটাপন্ন আফসানাকে রেখেই পাইলট আবিদের লাশ দাফন করে মাহিসহ স্বজনরা।

স্বজনরা আরো বলছে, স্বামীর মৃত্যুর পর আফসানাকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়নি। মাহিও একইভাবে আছে। এতে তারা ভয় পাচ্ছে। কাঁদলে মন হালকা হতো। এখন ছেলেকে নিয়েই তাদের যত চিন্তা।

পরিবারের সদস্যরা জানান, মাহির বয়স ১৫ বছর। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার ‘ও’ লেভেল পরীক্ষা দেবে। পাইলট আবিদ বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের বৈমানিক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁর রানীনগরে। আবিদের বাবা এমএ কাশেমও ছিলেন বৈমানিক।

অন্যদিকে আফসানার গ্রামের বাড়ি নাটোরে। তার বাবা কাশেম শেখ একজন চিকিৎসক। একমাত্র ছেলে মাহিকে নিয়ে আবিদ-আফসানা দম্পতি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর বাসায় থাকতেন।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT