শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
চলন্ত বাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যা
প্রকাশ: ১০:০৪ am ৩০-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:০৭ am ৩০-০৮-২০১৭
 
 
 


ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ধর্ষক-খুনিরা। চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন ল’ কলেজছাত্রী রুপা প্রামাণিক। ধর্ষণের পর তাকে ঘাড় মটকে হত্যা করে ধর্ষকরা। রুপাকে হত্যার পর লাশ মধুপুরে বনে ফেলে রেখে যায় ধর্ষকরা। উল্লেখ্য, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর রুপা ভর্তি হন ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে। এলএলবি শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রী রুপা প্রামাণিক (২৫) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ী গ্রামের মৃত জুলহাস প্রামাণিকের মেয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইউনিলিভারে কাজ করতেন, কর্মস্থল ছিল ময়মনসিংহে। বর্বরোচিত এ ঘটনায় শোকে কাতর হয়ে পড়েছে রুপার পরিবারের সদস্যরা। রুপার পরিবারে এখন চলছে আহাজারি। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া পাঁচ শ্রমিকের মধ্যে তিন বাস শ্রমিক গতকাল সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা সবাই চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দেয়। পুলিশ ও ওই তরুণীর পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ২৫ আগস্ট রুপা বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার উদ্দেশে ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রওনা হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মধুপুর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া আসামিরা পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ওইদিন রুপা ছাড়া মাত্র পাঁচ-ছয়জন যাত্রী ছিল বাসে। রুপা ছাড়া অন্য সব যাত্রী সিরাজগঞ্জ মোড় ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নেমে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার সময় রুপা একাই বাসে ছিলেন। বাসটি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কাছাকাছি এলে হেলপার শামীম রুপাকে জোর করে বাসের পেছনের আসনে নিয়ে যায়। এ সময় রুপা তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন শামীমকে দিয়ে দেন। ধর্ষণ না করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু শামীমই প্রথম ধর্ষণ করে। হেলপার আকরাম ও জাহাঙ্গীরও ধর্ষণে অংশ নেয়। বাসটি ঘাটাইল উপজেলা এলাকা অতিক্রম করার সময় রুপা কান্নাকাটি ও চিত্কার করা শুরু করলে তারা তিনজন মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায়ে ঘাড় মটকে রুপাকে হত্যা করা হয়। মধুপুর উপজেলা সদর অতিক্রম করার পর বন এলাকা শুরু হলে পঁচিশ মাইল নামক স্থানে রাস্তার পাশে রুপার লাশ ফেলে রেখে চলে যায় তারা। ঘটনার রাতেই পুলিশ রুপার লাশ থানায় নিয়ে যায়। পরদিন হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্তানে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে লাশ দাফন করা হয়। এর পরদিন পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মধুপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। অন্যদিকে ঘটনার দিন রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত রুপার সঙ্গে তার বড় ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তার পর থেকেই রুপার ফোন বন্ধ পাওয়া যায় বলে জানান হাফিজুর রহমান। পরদিন বোনের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে হাফিজুর ময়মনসিংহ যান এবং ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। পরে মধুপুর বনাঞ্চলে এক তরুণীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে হাফিজুর গত সোমবার রাতে মধুপুর থানায় যান। থানায় সংরক্ষিত লাশের ছবি দেখে তা রুপার লাশ বলে তিনি শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশ গত সোমবার রাতেই বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোঁয়া পরিবহন বাসটি মধুপুর অতিক্রম করার সময় এর চালক, সুপারভাইজর ও হেলপারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। বিকেল ৪টার দিকে গ্রেফতারকৃত বাসের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) টাঙ্গাইল বিচারিক হাকিম আদালতে নেওয়া হয়। আকরাম ও জাহাঙ্গীরের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। শামীমের বাড়ি মুক্তাগাছার নন্দিবাড়ী। টাঙ্গাইলের সিনিয়র বিচারিক হাকিম গোলাম কিবরিয়া আসামি আকরাম, আমিনুল ইসলাম শামীম ও শামছুল হক জাহাঙ্গীরের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে তাদের টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গ্রেফতারকৃত বাসচালক হাবিব (৪৫) ও সুপারভাইজর সফর আলীকে (৫৫) আজ আদালতে হাজির করা হবে। এর মধ্যে দুজনের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। মধুপুর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম জানান, চালক ও সুপারভাইজর ধর্ষণে অংশ না নিলেও তাদের সামনেই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। তারা লাশ ফেলতে সহায়তাও করেছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম এম জানান, মেয়েটির লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশ মাঠে নামে। এ ঘটনায় জড়িত সব আসামিকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT