রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
উবারের পর এবার পাঠাও এ নারী যাত্রীকে হয়ারনীর অভিযোগ
প্রকাশ: ১২:১৯ pm ০৩-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ১২:২৫ pm ০৩-০৭-২০১৭
 
 
 


 অ্যাপভিত্তিক অন ডিমান্ড কার সার্ভিস উবারের পর একই প্রক্রিয়ায় পরিচালিত বাংলাদেশি মোটরসাইকেল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পাঠাও-এর এক চালককে বরখাস্ত (ব্যানড) করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার বিকেলে এক নারী যাত্রীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে পাঠাও'র মোটরসাইকেল চালককে বরখাস্ত করা হয় বলে জানা গেছে।

রোববার রাত ১১ টা ৫৬ মিনিটে ফেসবুকে If you're a girl, DO NOT use Pathao to travel শিরোনামে অভিযোগ বর্ণনা করে একটি স্ট্যাটাস দেন এলেনা হুসাইন নামের ওই নারী যাত্রী। পরবর্তীতে এই অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শুরু করলে এক ঘন্টার মধ্যেই রাত ১২টা ৪২ মিনিটে পাঠাওর ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফাহাদের পক্ষ থেকে পাঠাও পেইজ থেকে জানানো হয় অভিযুক্ত চালক মোহাম্মদ আহসানুল ইসলামকে তারা ব্যানড করেছে। 

ঘটনার বিস্তারিত লিখে ফেসবুক স্ট্যাটাসে এলেনা জানান, আজ(রোববার) ৩টা ১৬র দিকে আমি প্রথমবারের মতো পাঠাও কল করেছিলাম। আমি বন্ধুদের সাথে বসুন্ধরায় ছিলাম। আমার তারাতারি বাসায় ফেরার দরকার ছিল, কারণ আমি অসুস্থ বোধ করছিলাম। আমি প্রথমে উবার ডাকতে গিয়ে দেখি সেখানে খরচ অনেক বেশি, আর সিএনজিতেও আমার কিছু খারাপ অভিজ্ঞতাও আছে, তাই আমি এই ঝুঁকিটি নিয়েই ফেললাম।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে পাঠাও চালক আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং লোকেশন ঠিক করি যেখান থেকে দেখা করব। যখন সে আসে আমাকে কোন হেলমেট নিতে বলেন নি। আমি তাকে ওঠার আগেই বলে নেই যে এটা আমার পাঠাওতে প্রথম রাইড, আর প্রথমবারের মতোই আমি মোটোরসাইকেলে উঠছি। 

সৌভাগ্যবশত আমাকে তুলে দিতে আমার বন্ধুরাও এসেছিল এবং তারা আমার ছবি তুলছিল। কিন্তু তখন ওই চালক কড়াকড়িভাবে জানিয়ে দিলো ছবি তোলা নিষেধ। আমি শুধু এইজন্য মেনে নিয়েছিলাম কারণ, আমার বন্ধুদের কাছে শুনেছি পাঠাও নাকি নিরাপদ সার্ভিস। তাই আমিই পাঠাওর বাইকে উঠেছি।  

এলেনা হুসাইন জানান, আমি যখন বাইকে উঠি তখন আমার নিরাপত্তার জন্য উনি আমাকে আরও কাছে এসে শক্ত করে ধরতে বলে। কিন্তু আমার কাছে কেন যেন মনে হয়েছে তার অন্যরকম চিন্তা ছিল তাই সে আমাকে বার বার একই কথা বলছিল। যখন আমরা ফ্লাইওভাররে কাছে পৌছালাম তখন সে বলল, আমি ঠিকানা চিনিনা আর ফ্লাইওভারের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। পরবর্তীতে সে সঠিক পথে যাওয়া শুরু করে যা আমি শুরু থেকেই নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। ফাইনালি যখন আমরা ফ্লাইওভারে উঠলাম তখন দেখলাম ওই চালক তার লুকিং গ্লাসটা আমার চেহারার দিকে তাক করছে এবং হেলমেটের গ্লাসটা খুলে আয়নার ভেতর দিয়ে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।  

অভিযোগ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে আমি তাকেই কিছুই বলিনি কারণ, আমি জানিনা বাইক চালানোর সময় কি হয়। আর এটাকে স্বাভাবিক ভেবেছি যতক্ষন না তিনি রিজেন্সির কাছাকাছি জায়গায় থামলেন এবং বললেন কয়েকটি সেলফি তুলবেন যা তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আর পাঠাও’র কাজেও লাগবে। এর আগে আমি দেখেছি অনেকেই চালকের সাথে ছবি তোলে, তাই স্বাভাবিক এভবে আমিও অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবেই আমি তাকে মানা করি কারণ সে যখন ছবি তুলছিলো তখন বিশেষভাবে আমাকে তার কাধে হাত রাখার জন্য অনুরোধ করে।

স্ট্যাটাসে তিনি আরও অভিযোগ করেন, যখন আমরা উত্তরার কাছাকাছি পৌছে যাই, তখন চালক বাইকটির গতি কমিয়ে আনেন এবং আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, পাঠাওতে এটা তার প্রথম রাইড। তার এক বন্ধুকে নামাতেই তিনি বসুন্ধরায় এসেছিলেন, আর সৌভাগ্যক্রমে আমার সাথে দেখা করার সুযোগ হয়ে গেল। এরপর সে আমাকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করল আমি কোথায় পড়াশোনা করি, উত্তরা কোথায় থাকি, আমি সাধারনত কীভাবে কাছকাছি চলাচল করি, কেনো আমার গাড়ি নিতে আসলো না। সে যুক্তরাজ্য থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে বলেও জানাল যদি এটা আমার জানার কোন দরকারই ছিল না। তার এসব প্রশ্নে আমি হাসছিলাম আর মাথা নাড়াচ্ছিলাম, কারণ অল্প সময়ের জন্যে হলেও আমি ভয় পেয়েছিলাম।

এলেনা বলেন, সত্যি বলতে আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি খারাপ ব্যবহার করি, তাহলে যদি সে আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যায় এবং এমন কিছু যার জন্য আমাকে সারাজীবন ভুগতে হবে। পরে তিনি আমাকে বলে, সে প্রায়ই উত্তরা আসতে পারে এবং আমাকে আমার বাসা থেকে নিয়ে ৩০০ ফিটের দিকে ডেট করতে যেতে পারে। আমি কখন ফ্রি থাকি এবং রাতে আমার সাথে ফোনে কথা বলা যাবে কিনা সে তাও জিজ্ঞেস করে। তাতক্ষনিকভাবে আমি আলাপের বিষয়বস্তু থেকে বের হতে চাই, কারণ আমি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইনি। সৌভাগ্যক্রমে আমি তখন আমার গন্তব্যের কাছিকাছি থাকায় আমি তাকে পথ নির্দেশনা দিতে থাকি। আমি তাকে আমার বাসা চেনাতে চাইনি বলে অন্য একটি বাসার সামনে গিয়ে থামি এবং আমি তাকে বলি যে আমি এই বাসাতেই থাকি। যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাড়া কত হয়েছে তখন সে ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে, আমাদের তো প্রায়ি দেখা হবে। কিন্তু আমি তাকে জোর করে ভাড়া দিয়ে চলে আসি। 

তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমি যখন বাসায় আসি, সাথে সাথে ওই চালকের নাম্বার ব্লক করি এবং পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ করি। এরপর আবারও ওই ব্যক্তি অন্য নাম্বার দিয়ে কল দেওয়ার সাহস দেখায়। আর আমি তার গলা শুনে চিনে ফেলি এবং এই নাম্বারটিও ব্লক করি।  এখন আমাকে বলুন এই দেশে এমন কোন সেবা কি আছে যা নারীরা তাদের জরূরী সময়ে যাতায়তের কাজে ব্যবহার করতে পারবে?

এদিকে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাঠাও থেকে ওই পোষ্টের কমেন্টে বলা হয়, হাই এলেন, আমাদের সেবা নারীদের জন্য সুবিধাজনক ও নিরাপদ করতে আমরা সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এতা আসলেই অগ্রহণযোগ্য ব্যবহার। আর তাই এই নির্দিষ্ট চালকের ব্যবহারের জন্য আমরা তাকে বরখাস্ত করেছি (পরবর্তীতে তাকে পাঠাও থেকে নিষিদ্ধ করা হয়)। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই আমরা চেষ্টা করছি পাঠাওকে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও নিরাপদ পরিবহন সেবা  হিসেবে তৈরি করতে। অন্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে এমন কোন ব্যবহার য়ামরা সহ্য করবো না।      

পাঠাওর ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফাহাদের পক্ষ থেকে ওই কমেন্টে আরও বলা হয়, আমি জানি এটা আপনার জন্য অবশ্যই খুব ভীতিকর ছিল। আমি দুঃখিত আপনার এই খারাপ অভিজ্ঞতার জন্য। আশা করি আপনি ভালো অনুভব করবেন।

 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT