বুধবার, ২২ মে ২০২৪ ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
আজ মহান স্বাধীনতা দিবস
প্রকাশ: ০৮:৩০ am ২৬-০৩-২০১৮ হালনাগাদ: ১২:৫০ am ২৬-০৩-২০১৮
 
 
 


আজ ২৬ মার্চ। বাঙালির শৃঙ্খল মুক্তির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দৃপ্ত শপথের দিন আজ। ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পোড়া কাঠ, লাশ আর জননীর কান্না নিয়ে রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। ভীতবিহ্বল মানুষ দেখল লাশপোড়া ভোর। সারি সারি স্বজনের মৃতদেহ। আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া। পুড়ছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সবুজ পতাকা। জ্বলছে শাড়ি, খুকুর ফ্রক। চোখে জল। বুকে আগুন। জ্বলে উঠল মুক্তিকামী মানুষের চোখ, গড়ল প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয় বাংলা’ তীব্র স্লোগান তুলে ট্যাংকের সামনে এগিয়ে দিল সাহসী বুক। আজ থেকে ৪৬ বছর আগের ঠিক এমনি এক ভোররাতে পাক বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। ঘোরতর ওই অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল একাত্তরের আজকের এই দিনে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকী। 

 

১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বাংলার মানুষের ভোটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার আড়ালে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বাংলার মুক্তকামী মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ২৫ শে মার্চ কালরাত্রিতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করে। মধ্যরাতেই অর্থাত্ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু ভবন) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন।

 

চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী সেই রাতেই সাইক্লোস্টাইল করে শহরবাসীর মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। পরে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সংক্রান্ত বিবৃতিটি সর্বপ্রথম পাঠ করেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। এরপর ২৭ শে মার্চ তত্কালীন মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

 

সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ রবিবার মহান স্বাধীনতা দিবসটি পালন করা হবে। সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়বে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। সকালে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দলমত নির্বিশেষে সেখানে হাজির হবে লাখো মানুষ। ভোর ৬টায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণের পরই সাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 

রাষ্ট্রপতির বাণী
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসীসহ প্রবাসে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরম শ্রদ্ধার সাথে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে নানা চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
 
প্রধানমন্ত্রীর বাণী

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে এ জাতি অর্জন করেছে প্রিয় স্বাধীনতা। তিনি স্মরণ করেন ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন, জাতীয় চার নেতাকে। তিনি বলেন, সম্মান জানাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সকল বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতি, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অকৃপণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

 

কর্মসূচি
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT