শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
সরকারের নানামুখী উদ্যোগে ভালো দাম থাকায় পাটের আবাদ বেড়েছে
প্রকাশ: ০৯:৫৩ am ২০-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৫৬ am ২০-০৭-২০১৭
 
 
 


সরকারের নানামুখী উদ্যোগে বছরজুড়ে পাটের তুলনামূলক ভালো দাম থাকায় পাটের আবাদ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে দেশে ৭৪ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় পাটের ফলনও বাড়তে পারে বলে জানান কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তারা। তারা জানান, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় আমন ধান রোপণের জন্য আগাম পাট কাটা শুরু হলেও অধিকাংশ জেলায় পাট কাটা শুরু হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে ৮ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৮৮ লাখ বেল পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৭ লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে দেশি পাট ৪৬ হাজার হেক্টর, তোষা ৭ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর, মেস্তা ওকেনাফ ৪৩ হাজার হেক্টর। গত বছর ৭ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার বেল পাট উত্পাদিত হয়। মেহেরপুর সদর উপজেলার গারাডোব গ্রামের কৃষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর পাটের দাম পেয়ে চাষিরা খুশি। আবারও দামের আশায় চাষিরা বেশি পরিমাণে পাট আবাদ করেছেন। তবে এখন পাটের তুলনায় পাটকাটির চাহিদা চাষিদের কাছে বেশি। কোনো কোনো কৃষক আমন আবাদ বন্ধ রেখে পাট চাষ করতে পারেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) অর্থনীতি ফসল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান-ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলায় এ বছর বেশি পরিমাণে পাটের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পাটের আবাদি এলাকা বাড়ছে।    আমাদের ফরিদপুর প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন জানান, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফরিদপুরে মানসম্পন্ন পাট উত্পাদন হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে পাটের আবাদ ও উত্পাদন। কৃষকদের দাবি, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হলে জেলায় পাটের আবাদ আরও বাড়বে। ফরিদপুর পাট গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে দুই জাতের তোসা জিআরও ৫২৪-ভারতীয় এবং মাস্তে ও-৯৮৯৭ দেশি জাত আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় জাতের পাট ৯০ শতাংশ চাষ হয়ে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ২০১০-১১ সালে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উত্পাদন করা হয়। ২০১৬-১৭ সালে ৮২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করে ৯ লাখ ২ হাজার ১৪৫ বেল পাট উত্পাদন করা হয়। আর চলতি ২০১৭-১৮ সালে ৮২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার ১৫১ বেল। গত সাত বছরে পাটের আবাদ বেড়েছে ৭ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে, যা অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন জেলার পাটচাষিরা। সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ফরিদপুর জেলার কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে পাট আবাদ করে বেশ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা পাট আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। জেলার অন্যতম পাটের বাজার বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার। সেখানকার পাট ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম, খন্দকার নাছিরুল ইসলাম, লিয়াকত হোসেনসহ কয়েকজন জানান, বর্তমানে প্রথম শ্রেণির পাট প্রতিমণ ২০০০ থেকে ২৩০০ টাকায়, দ্বিতীয় শ্রেণির পাট ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সর্বনিম্ন পাট প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়। তারা জানান, এ বছর সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকায় প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ধুলপুকুরিয়ার পাটচাষি পরিতোষ কীর্তনিয়া ও সোলায়মান শেখ জানান, বিপুল পরিমাণ পাট উত্পাদন হলেও অনেক সময় পানির অভাবে পাট পচানো সম্ভব হয় না। তবে এবার পানির সমস্যা কম হবে। যার কারণে পাটের ভালো রঙ পাওয়া যাবে। ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জিএম আবদুর রউফ জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট আবাদে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হলেও তারা বিষয়টিকে নানা ঝামেলার মনে করে গ্রহণ করছেন না। তিনি জানান, আবহাওয়াগতভাবে ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্য উপযোগী। তাই ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা পেলে কৃষকরা আরও বেশি পাট আবাদে আগ্রহী হবেন। পাটের পণ্য ব্যবহার বাড়াতে সরকার বেশ কয়েকটি পণ্যে পাটের মোড়ক বাধ্যতামূলক করেছে। চলতি বছর সোনালি আঁশ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ৬ মার্চ প্রথমবারের মতো সারাদেশে ‘জাতীয় পাট দিবস’ পালিত হয়। 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT