শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
শিশুদের গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে
প্রকাশ: ১২:৫০ pm ২৬-১২-২০১৬ হালনাগাদ: ১২:৫১ pm ২৬-১২-২০১৬
 
 
 


বাংলাদেশে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার আগের বছরগুলোর তুলনায় কমেছে। অন্যদিকে বুকের দুধের পরিবর্তে শিশুদের গুঁড়ো দুধ খাওয়ানোর হার বিপদজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে ২০১১ সালে সদ্যজাত থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯ শতাংশ কমে ৫৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্র্যাকের গবেষণায় এই চিত্র দেখা গেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানাবিধ সুপারিশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন)কে শক্তিশালী করার সুপারিশ উঠে এসেছে। সম্প্রতি ‘চাইল্ড নিউট্রিশন ও বিএমএস অ্যাক্ট ২০১৩’ এক সভায় মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প সংক্রান্ত আইন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ)-এর সভাপতি ডা. এস. কে. রায়। সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের স্টাফ গবেষক ফাহমিদা আক্তার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিশু, পুষ্টি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গবেষক ফাহমিদা আক্তার বলেন, মায়ের বুকের দুধ পান নিশ্চিত করা হলে বিশ্বে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী ২ লাখ ২০ হাজার শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও সমাজে অগ্রগতি সমানভাবে আশানুরূপভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশে ২০১১ সালে সদ্যজাত থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের শুধু বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ যা বর্তমানে ৯ (নয়) শতাংশ কমে ৫৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আবার গুঁড়া দুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে। মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এর বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে আছে। ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী, দোকান ও ফার্মেসি এবং পরিবার পর্যায়ে এ আইন সম্পর্কে ধারণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিপরীতে গুঁড়ো দুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের এ আইন সম্পর্কে প্রখর জ্ঞান রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য বাজার তদারকির ব্যবস্থা আরো অনেক জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকেও জনবল ও সামর্থ্যের দিক থেকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। দেশের পুষ্টিবিদদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে গুঁড়ো দুধ ও শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে ক্রমশ আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছে। এ আইন বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং গুঁড়ো দুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন গণমাধ্যমের এগিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দেন, পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। শিশু বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ পিডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীদারকে যার যার জায়গা থেকে নিবিড় দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ আইন ভঙ্গ করার জন্য মামলা করতে হবে এবং অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইন হিসেবে চিকিৎসকদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আইপিএইচএন  কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত মোট প্রসবের মাত্র ৩৫ শতাংশ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হচ্ছে। বাকি ৬৫ শতাংশ প্রসব বাসাবাড়িতে হয়। শিশু জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বাড়াতে হবে। আর তা করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি পক্ষগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়াতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই আর সেজন্য মসজিদ-মন্দিরসহ জনসমাগমের সব স্থানকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষায় আইনটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অনুরোধ করার কথা বললেন তারা। মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বাজারজাতকরণ কৌশলকে পরাজিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বহুমুখী ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে হবে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT