শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
ব্রেইন স্ট্রোকের লক্ষণ ও চিকিৎসা
প্রকাশ: ০৪:১২ pm ০৯-০২-২০১৭ হালনাগাদ: ০৪:১৮ pm ০৯-০২-২০১৭
 
 
 


ব্রেইন স্ট্রোকের বিষয়টি মস্তিষ্কের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র অনেকের কাছেই অজানা একটি বিষয়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় এটিই।

মস্তিষ্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ এবং পুরো শরীরের চালিকা শক্তি। মস্তিষ্কের কোষকলা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য মস্তিষ্কে রক্তের মাধ্যমে অবিরাম অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ জরুরি। কোন কারণে মস্তিষ্কের কোন অংশে রক্ত প্রবাহ হ্রাস পেলে মস্তিষ্কের কোষকলার মৃত্যু ঘটে এবং শরীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কার্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি হয়। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের পরিমাণ আকস্মিকভাবে হ্রাস পাওয়াকেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা ব্রেইন স্ট্রোক বলা হয়।

কারণ : বিভিন্ন কারণে মস্তিষ্কে স্ট্রোক দেখা দিতে পারে। মস্তিকের মধ্যস্থ কোন ধমনী বা শিরা সরু হয়ে গেলে অথবা কোন কারণে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয় তাকে ‘ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিবা অ্যাটাক’ বলা হয়। বেশির ভাগ রোগী এ ধরনের স্ট্রোকেই আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও মস্তিষ্কের মধ্যস্থ কোন অংশ বা মস্তিষ্ক এবং খুলির মধ্যবর্তী কোন অংশ বা শিরা থেকে রক্তপাত ঘটার কারণেও স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ ধরনের স্ট্রোককে ‘হেমোরেজিক স্ট্রোক’ বলা হয়।

‘ইসকেমিক’ স্ট্রোক ক্ষণস্থায়ী হয় এবং এক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে রোগের লক্ষণ থেকে মুক্তি লাভ করতে দেখা যায়। একবার ‘ইসকেমিক’ স্ট্রোকে আক্রান্তদের আবার একই ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি থাকে পরবর্তীতে এদের হেমোরেজিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বেশি। ‘হেমোরেজিক স্ট্রোকে’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার কারণে স্ট্রোকজনিত লক্ষণসমূহ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে এবং চিকিৎসা লাভের পরও শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে অনেক ক্ষেত্রেই কিছু সময় লাগে এবং কোনও কোনও সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা যায়। মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হওয়ার কারণে সাধারণত মাথার যেদিক আক্রান্ত হয় তার বিপরীত দিকের শরীরের অংশ বা অংশ বিশেষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা নড়াচড়ায় নিয়ন্ত্রণহীনতা দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তির ক্ষতি সাধিত হয়, ভাষা ব্যবহারে এবং বুঝতে অসুবিধা হয়, আবেগের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা এবং ব্যথাসহ স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দেয়ার আশংকা থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। রোগীর সেরে ওঠার মাত্রা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশের কতটা কোষকলা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর।

তবে যে কোনও ধরনের স্ট্রোকই হোক না কেন চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে যত বেশি কালক্ষেপণ হয় ততই তা জটিল হয়ে উঠতে পারে এবং মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হওয়ার আশংকাও বেশি থাকে। তাই লক্ষণের প্রকাশ দেখা গেলেই তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় এনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত।

কাদের ঝুঁকি বেশি : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার আশংকা বাড়তে থাকে বিশেষ করে ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এ রোগের ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলস্টেরল বা হূদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত এবং ধূমপায়ীদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেশি। কোকেনজাতীয় মাদকসেবনের ফলে ৫০ বছরের চেয়ে কম বয়সীদেরও কখনও কখনও রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।


ব্রেইন স্ট্রোক এর লক্ষণ: 

  • হঠাৎ করে শরীরের কোথাও অবশ কিম্বা দুর্বলতা অনুভব করা। বিশেষ করে শরীরের যে কোন পাশ বা অংশ। 
  • হঠাৎ কথা বলার সময় মুখের/জিহ্বার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলা অথবা কারো কথা শোনার সময় না বুঝা। 
  • হঠাৎ করে এক অথবা দুই চোখে না দেখতে পাওয়া, কিম্বা দেখতে অসুবিধা হওয়া। 
  • হাটার সময় অসুবিধা বোধ করা, মাথা ঝিনঝিন কিম্বা শরীরের ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পারা। 
  • হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করা। 

‘ইসকেমিক’ এবং ‘হেমোরেজিক’ উভয় স্ট্রোকের একই ধরনের লক্ষণ হতে পারে। প্রধান লক্ষণ হল কথা বলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়া। তাই হঠাৎ বয়স্ক কারও শব্দ চয়নে অসুবিধা বা কথাবার্তায় অসংলগ্নতা দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। হাতের আঙুল, পায়ের পাতা, শরীরের একদিকের হাত বা পা নাড়াতে কষ্ট হওয়া, মুখমণ্ডল নাড়ানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা বা মুখের একদিকের মাংসপেশিতে অসাড়তা দেখা দেয়া, আগে কখনও অনুভূত হয়নি হাত বা পায়ে এমন ধরনের ভার বোধ হওয়া, খিল ধরে যাওয়া, অসাড়তা দেখা দেয়া ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। এ ধরনের সমস্যাগুলোর তীব্রতা মাঝারি থেকে প্রবল হয়ে উঠতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ঝাঁপসা হয়ে পড়া, ঝিমুনি ভাব, শরীরের ভারসাম্য অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমি হওয়া, মলমূত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা ইত্যাদিও এ রোগের লক্ষণ। কারও কারও ক্ষেত্রে মানসিক বিভ্রম বা বিষণ্নতাও দেখা দিতে পারে।

রোগ নির্ণয় :
কোন ব্যক্তি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা ঘরে বসে নির্ণয় করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর হাসতে অসুবিধা হচ্ছে কি না বা হাসতে গেলে গাল বা চোখ বেঁকে বা কুঁচকে যাচ্ছে কিনা, রোগী দু’হাত উপরে ওঠাতে এবং সোজা অবস্থায় ধরে রাখতে পারছে কিনা অথবা রোগী সঠিকভাবে কথা বলতে এবং বুঝতে পারছে কিনা তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। যে কোনও একটি লক্ষণের প্রকাশ ঘটলেই রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

হাসপাতালে রোগীর স্ট্রোকের ধরন ও আক্রান্ত স্থানের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য সাধারণত ‘কমপিউটেড টমোগ্রাফি (সিটি)’ বা ‘ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) করা হয়। এছাড়া আনুষঙ্গিক আরও বিভিন্ন ধরনের কিছু পরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা :
অসুখের ধরন জেনে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ‘ইসকেমিক’ স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ‘অ্যাসপিরিন’ বা অন্য কোন ধরনের রক্ত পাতলা করার ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কখনও কখনও শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয় এমনকি ক্যাথেটারের সাহায্যে তা সরাসরি মস্তিকেও প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

কোনও কোনও ক্ষেত্রে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করার জন্য বা সরু হয়ে যাওয়া শিরার প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য মস্তিষ্কে অপারেশন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কখনও কখনও হূৎপিণ্ডের ন্যায় এক্ষেত্রেও এনজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়ায় ‘স্ট্যান্টিং’ করার ব্যবস্থাও করা হয়।

‘হেমোজেরিক’ স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্তপাত বন্ধ ও মস্তিষ্কের চাপ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত শিরা মেরামত করার লক্ষ্যে অপারেশন করার প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়। জটিল ক্ষেত্রে শিরার কিছুটা অংশ কেটে ফেলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে যতটা সম্ভব রোগী যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT