শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
ব্যাংক খাতে ৭৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ
প্রকাশ: ১১:৩১ am ১৮-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১১:৩২ am ১৮-০৮-২০১৭
 
 
 


লাগামহীনভাবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গণহারে ঋণ পুনঃতফসিল ও ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ নিয়েও গ্রাহকরা সময়মতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এতে বিশেষ সুবিধার ঋণগুলোও পুনরায় খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুন-১৭ শেষে ব্যাংকগুলোর শ্রেণিকৃত তথা খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বর-১৬ শেষে ছিল ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। সে হিসেবে বিগত ছয় মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। অর্থাত্ বিতরণ হওয়া মোট ঋণের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ খেলাপি। যা ছয় মাস আগেও ছিল ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত তিন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সামান্য কমলেও বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে বেড়েছে। গত মার্চ শেষে মোট ঋণ ছিল ৬ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হওয়া ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ছিল মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এতে করে গত তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৩৪ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩৯ কোটি টাকা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর প্রভাবে সামগ্রিক ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও কমেছে সরকারি ব্যাংকে। গত জুনে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা কমে ৩৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকায় নেমেছে। মোট ঋণের যা ২৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তিন মাস আগে মোট ঋণের ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি। দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা থেকে কমে ৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকায় নেমেছে। মোট ঋণের যা ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে তিন মাসে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ১ কোটি টাকা বেড়ে ৩১ হাজার কোটি টাকায় উঠেছে। হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ বিবেচনায় পুনঃতফসিল হওয়া ঋণের বড় অংশই সরকারি ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ব্যাংক খাতে মোট ৭০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর বড় অংশই শিথিল শর্তে পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। একটি সময় যেকোনো ঋণ পুনঃতফসিল করতে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে ডাউনপেমেন্ট দিতে হতো। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে খেলাপি ঋণ ব্যাপকহারে বাড়তে থাকায় ২০১৩ সালে এই শর্ত শিথিল করা হয়। এরপর ঋণ পুনঃতফসিল ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। ২০১২ সালে যেখানে মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছিল। বিশেষ সুবিধা চালুর পর ২০১৩ সালে তা কয়েকগুণ বেড়ে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। গত বছর পুনঃতফসিল হয়েছে ১৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এই পুনঃতফসিলের ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাঁচটি, একটি বিশেষায়িত ও চারটি বেসরকারি ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উত্পাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুত্ না পাওয়ার কারণে উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT