সোমবার, ১৩ মে ২০২৪ ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
কুষ্টিয়ায় যেন মৃত্যুর মিছিল থামছেই না
প্রকাশ: ১০:১৩ am ১৬-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ১০:১৭ am ১৬-০১-২০১৮
 
 
 


খানাখন্দ সড়কে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস খাদে পড়ে হেলপারের মৃত্য বাস খাদে পড়ে হেলপারের মৃত্য

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়ায় যেন সড়ক দুর্ঘটনা কিছুতেই কমছে না, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অবস্থা ‘মহামারী’ আকার ধারণ করেছে বললেও ভুল হবে না। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। মুল সমস্যা হিসেবে সড়ককেই দায়ী করছে সচেতন মহল। এসবের প্রতিকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়লেও নীরব রয়েছে সংশ্লিষ্টরা। 
গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা সড়কের গোবিন্দপুর নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী উল্টে খাদে পড়ে কালু (৩৫) নামের এক বাসের হেলপারের মৃত্যু হয়। এঘটনায় আহত হয় বাসের অন্তত ১৫ জন যাত্রী। স্থানীয়দের সহযোগীতায় কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র ষ্টেশন অফিসার আলী সাজ্জাদ জানান, ভেড়ামারা থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস কুষ্টিয়া যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার গোবিন্দপুর নামক স্থানে পৌছালে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাসটি পাশ্ববর্তি খাদে উল্টে যায়। আহতদের মধ্যে ১৫জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল  ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন আহতরা জানায়, কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা সড়কের মজমপুর থেকে ১১ মাইল পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। ভাঙ্গা সড়কের কারনেই গোবিন্দপুরের কাছে বাসটি পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসার একটি ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে  চালক নিয়ন্ত্রন হারায়। এসময় বাসটি পাশের একটি খাদে উল্টে পড়ে। ঘটনাস্থলে চাপা পড়ে হেলপারের মৃত্যু হয়। গত সপ্তাহের বুধবার দুপুরে ভাঙ্গা সগকের কারনে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকায় একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদের পড়ে বাসের চালক ও সহকারী চালকের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আরো ২৫ জন যাত্রী আহত হয়। এসব দুর্ঘটনার মুল কারনই সড়কের বেহাল অবস্থা। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়। 
এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছর কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮৩জন মানুষ। আহত হয়েছে অন্তত দেড় হাজার মানুষ। পঙ্গুত্ববরণ করছেও কম নয়। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
একটি সুত্র জানায়, সম্প্রতি দুর্ঘটনা মহামারীর আকার ধারণ করার জন্য যেসব কারণকে দায়ী করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সড়ক মহাসড়কের বেহাল দশা। এছাড়াও চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো এবং সময়মতো গাড়ী না পৌঁছানো। সময় বেঁধে দেওয়ায় (এরাইবেল) ঠিকমতো না পৌছাতে পারলে জরিমানা গুনতে হবে। তাই তারা কখনো কখনো সময় কালক্ষেপন করে আবার কখনো কখনো দ্রুতগতিতে বাস চলাচল করে থাকে এসব সমস্যা বার বার চিহ্নিত হলেও এর কোন প্রতিকার নেই।
কুষ্টিয়ার এ সড়কের বুকজুড়ে শুধু বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ। বিশেষ করে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেট থেকে ভেড়ামারা ১১ মাইল পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। এসব এলাকায় সড়কের প্রায় বেশিরভাগ কার্পেটিং ও ইট খোয়া উঠে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। দেশের উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের ৩২ জেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ কুষ্টিয়ার মহাসড়ক। সড়ক বিভাগের মতে, প্রতিদিন ১১ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করে এ সড়কে। প্রতিনিয়ত সড়কে ভারী যানবাহন থেকে শুরু করে বিকল হয়ে পড়ছে অনেক যানবাহন।যে কারনে যানজট লেগেই থাকে।


সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২ বছরে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত কয়েক মাস আগেও এ দুটি মহাসড়ক নামমাত্র সংস্কার করা হয়। এ ছাড়া জরুরি মেরামতের কাজ সারা বছর লেগেই আছে। এত অর্থ ব্যয় করার পরও দুই মহাসড়কের এমন ভয়াবহ অবস্থা হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন যানবাহন মালিক, চালক ও সাধারণ মানুষের। কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমকি ইউনিয়নে সভাপতি মাহাবুল আলম জানান, কুষ্টিয়ার এসব ভাঙ্গা সড়কের কারনে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠার মতো অবস্থা। প্রতিদিনই ভাঙ্গা সড়কের কারনে গাড়ী নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে। যাত্রী সাধারন তো বটেই চালক হেলপারও রেহায় পাচ্ছেনা দুর্ঘঠনার হাত থেকে। গত সপ্তাহে বাস দুর্ঘটনায় বাসের চালক ও হেলপার নিহত হয়েছে। আবার আজ (সোমবার) ভাঙ্গা সড়কের কারনে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে হেলপারের মৃত্যু হয়েছে। নিহত এসব চালক হেলপারদের পরিবারে শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই আমাদের। তিনি জানান, এসব ভাঙ্গা সড়কের কারনে এরআগে আমরা কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করেছিলাম। এছাড়াও সড়ক সংস্কারের দাবীতে জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি, জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছিলাম। তারা শুধূ আশ্বাসই দিয়েছেন। এসব সড়কে শীঘ্রই কাজ হবে বলেও আশ্বাস প্রদান করেন।

এস এম জামাল, কুষ্টিয়া থেকে।
 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT