শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
কিছু মিল মালিক সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন
প্রকাশ: ০৯:৩৬ am ১২-০৯-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৪১ am ১২-০৯-২০১৭
 
 
 


দীর্ঘ দিন খোলা হয় না গুদাম। তালায় জং পড়েছে। চাবি দিয়েও খুলছে না তালা। মাকড়সা জাল বুনেছে গোডাউনে। কবে সর্বশেষ গোডাউন খোলা হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না। কমপক্ষে মাস ছয়েক আগেই এসব ধান মজুদ করা হয়েছে গোডাউনে। খোদ বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের মিলের ১৩টি গুদামে গিয়ে এ চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন টাস্কফোর্সের প্রধান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম। এসব দেখে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন, চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদ বর্তমানে প্রতিদিন চাল বিক্রি করে অতিরিক্ত অন্তত ২৫ লাখ টাকা করে লাভ করছেন। তিনি জানান, তার কাছে মনে হচ্ছে এখান থেকেই দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের আরও জানান, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিছু মিল মালিক কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। সরু ও মিনিকেট চালের বড় জোগান কুষ্টিয়া থেকে যায়। তারাই সিন্ডিকেট করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ধান ও চাল মজুদ করে রাখছেন। গত এক মাসে দুই দফায় কুষ্টিয়ায় মিনিকেটসহ সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বৃদ্ধি করায় টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে সোমবার দুপুরে খাজানগরে চালের মোকামে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। টাস্কফোর্স টিম খাজানগর এলাকায় চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের মালিকানাধীন রশিদ অ্যাগ্রো লিমিটেডে অভিযান চালায়। এ সময় টাস্কফোর্স দেখতে পায়, এসব গুদাম দীর্ঘদিন খোলা হয় না। দীর্ঘদিন না খোলায় তালায় জং ধরায় একটি গোডাউনের তালা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলতে হয়। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে বিস্মিত হয়ে যান অভিযানকারী দলের সদস্যরা। তারা ধানের বস্তার চেহারা দেখে বলেন, এই ধান চার থেকে পাঁচ মাস বা তারও বেশি সময় আগে সেই সময়ের বাজার দরে (অনেক কম মূল্যে) কেনা হয়েছে। ওই চালকলের এক কর্মকর্তা টাস্কফোর্সকে জানান, প্রতিদিন তাদের মিলে ৫০০ টন চাল উত্পাদন হয়। এ সময় টাস্কফোর্সের প্রধান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ওই চালকলের চাল বিক্রির রেজিস্ট্রার চেক করে দেখেন, গত মাসে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হয়েছে ৫১.৫০ টাকা দরে। সোমবার সেই চাল বিক্রি করা হয়েছে ৫৬.৪০ টাকা দরে। এসব যাচাই-বাছাই করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম জানান, এখন থেকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানের পর টাস্কফোর্স বলছে, চালের দাম দফায় দফায় বাড়ার পেছনে যে চালকল মালিকদের কারসাজি রয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে মিনিকেট চালের সর্ব বৃহত্ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে এসে। ওই অভিযানে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের চাল উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ট্রাস্কফোর্স দল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের মিনিকেট চালের প্রধান জোগান যায় কুষ্টিয়ার এই কবুরহাট-খাজানগর এলাকার মোকাম থেকে। গত এক মাসের ব্যবধানেই এই মোকামে মিনিকেট চালের দাম দুই দফায় বেড়েছে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা। চালকল মালিকদের দাবি, বন্যার কারণে ধানের চরম ক্রাইসিস। তাই বর্তমানে বাজার থেকে বেশি দামে ধান কেনার কারণেই তারা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বর্তমানে যে ধান থেকে চাল উত্পাদন করা হচ্ছে সেই ধান কয়েক মাস আগে ভরা মৌসুমে কম দামে বাজার থেকে সংগ্রহ করে গুদামজাত করা হয় বলে চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কুষ্টিয়ার ৭০ জন বড় চালকল মালিকের মিলে প্রায় ১০ লাখ টন ধান মজুদ রয়েছে। যেসব ধান বেশ কয়েক মাস আগেই বাজার থেকে কেনা হয়েছে। এর মধ্যে চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রশিদের গুদামেই দুই লাখ টন ধান মজুদ আছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাটির ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। সূত্রটি জানায়, খাজানগর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু গুদামে আবদুর রশিদ ধান মজুদ করে রেখেছেন। এদিকে, গত কোরবানির ঈদের আগে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি ৫৪ টাকা থাকলেও ঈদের পর গত শনিবার থেকে দ্বিতীয় দফায় চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা। এখন কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য চালের দামও কেজিপ্রতি এক থেকে দেড় টাকা বেড়ে গেছে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT