শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
ই-জিপি ব্যবহার শুরুর পর দরপত্রে অংশ নিচ্ছে দ্বিগুণ প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান
প্রকাশ: ০৫:০৩ pm ০৮-০২-২০১৭ হালনাগাদ: ০৫:০৭ pm ০৮-০২-২০১৭
 
 
 


সরকারি ক্রয় কাজে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শুরুর পর দরপত্রে অংশ নিচ্ছে দ্বিগুণ প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান। কমে এসেছে দরপত্র প্রক্রিয়ার ব্যয়। ডিজিটাল ব্যবস্থায় সারাদেশ থেকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকায় টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ বেড়েছে। ২০০৭ সালে প্রতি টেন্ডারে গড় প্রতিযোগী ছিল ৪ জন। বর্তমানে তা ৮ জনে উন্নীত হয়েছে। দরপত্র প্রক্রিয়ায় খরচ কমে এসেছে প্রায় ১২ শতাংশ।

টেন্ডার বাক্স ছিনতাই, প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দরপত্র জমাদানে বাধাদানের মতো বিষয়গুলো ডিজিটাল ব্যবস্থায় আর সম্ভব নয়। তাই ঠিকাদারি ব্যবসা আগের চেয়ে আরো নিরাপদ হয়েছে। শিগগিরই একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন করে সব ধরনের দরপত্র প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্র জনায়।

ই-জিপির (অনলাইনে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা) অধীনে ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৭৬ হাজার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে যার মোট মূল্য ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের অধীন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এর মাধ্যমে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সিপিটিইউ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১২৩৩ টি সরকারি ক্রয়কারী সংস্থার মধ্যে ৯১০টি ই-জিপিতে নিবন্ধিত হয়েছে।


ই-জিপির আওতায় ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে দরপত্র প্রণয়ন, বিজ্ঞাপন প্রকাশ, দরপত্র দাখিল, উন্মুক্তকরণ, মূল্যায়ন, অনুমোদন, কার্যাদেশ জারি ও চুক্তি সম্পাদন পর্যন্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার সকল ধাপই অনলাইনে হচ্ছে। শুধু চুক্তি ব্যবস্থাপনা এখনো ম্যানুয়ালি হচ্ছে।

ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়ায় কিছু সমস্যাও রয়েছে। প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবে অনেকেই এ প্রক্রিয়াতে অনীহা দেখিয়েছেন। তবে সিপিটিইউ দাবি করছে ই-জিপি সিস্টেমের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিয়ে কেউ এ পর্যন্ত অভিযোগ করেনি।

ম্যানুয়েল পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সরকার ক্রয় কার্যক্রমকে অধিকতর দক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ করার জন্য প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজড করা হয়েছে। তবে এখনো সব ধরনের দরপত্র ই-জিপির আওতায় নেই। সেজন্য একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন। সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্রয় কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হলে সেটি শুধু সিপিটিউর মাধ্যমে সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুযায়ী ক্রয় কার্যক্রমকেও টেকসই করতে হবে। সেজন্য ক্রয় কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপে প্রয়োজন মনিটরিং। স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠন হলে ই-টেন্ডার এর প্রতিটি কার্যক্রমে আইনগত ভিত্তি তৈরি হবে। তাছাড়া দেশে ক্রয় আইন থাকলেও সেভাবে সরকারি সম্পত্তির জন্য বিক্রয় আইন নেই। এধরনের আইনও তৈরি করার উদ্যোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে ই-টেন্ডার বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দরদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে ঢাকার বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও ইন্টারনেট ব্যবহার ও এর ধীরগতি এ ধরনের সমস্যা রয়েই গেছে। তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকায় অনেক ঠিকাদার বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে বা অন্য ব্যক্তির সহায়তা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ধরনের সমস্যায় দরদাতাদের তথ্য চুরির ঝুঁকি রয়ে যায়।

ই-জিপি সিস্টেমে দরদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্র দাখিলের সঙ্গে সঙ্গে ‘এনক্রিপটেড’ হয়ে যায়। দরপত্র যে জায়গা থেকেই দাখিল করা হোক না কেন উন্মুক্তকরণের জন্য নির্ধারিত তারিখের পূর্বে ক্রয়কারী দপ্তরের কর্মকর্তার পক্ষে কোনো দরদাতার তথ্য দেখা বা অন্য দরদাতাকে জানানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই দরদাতাদের দাখিলকৃত দরপ্রস্তাব শতভাগ নিরাপদ বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রত্যেক নিবন্ধিত দরদাতার আলাদা আলাদা ড্যাশবোর্ড আছে যা নিজস্ব পাসওয়ার্ড দ্বারা সুরক্ষিত। উন্মুক্তকরণের পূর্বে কতটি দরপত্র কারা জমা দিয়েছে সে তথ্যও আহ্বানকারী দপ্তর জানতে পারে না। উন্মুক্তকরণের সময় সকল প্রতিযোগী এবং আহ্বানকারী সংস্থা দরদাতাদের উল্লেখিত দর জানতে পারে- যা আইন অনুযায়ী ‘পাবলিক ওপেনিং’।

বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মাধ্যমে ৯১০টি ক্রয়কারী সংস্থা ই-জিপির মাধ্যমে ক্রয়কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের সবচেয়ে বড় ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডি প্রায় ৯৫ ভাগ ক্রয় কার্যক্রমে ই-জিপি ব্যবহার করছে। বর্তমানে ৫০ কোটি টাকা বা তার কম ক্রয় কার্যক্রমে ই-জিপি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ১০০ কোটিতে উন্নীত করা হয়েছে। একশ কোটির উপরের ক্রয় কার্যক্রমের জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়।

সিপিটিইউ সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেছেন, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় দরপত্র বিজ্ঞাপন ই-জিপি ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপে প্রকাশ ছাড়াও ই-জিপি গাইডলাইন অনুযায়ী সংক্ষিপ্তাকারে সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হচ্ছে। ই-জিপি বাস্তবায়নের ফলে টেন্ডার দখল বা টেন্ডার জমাদানে বাধা দেওয়ার ঘটনাও এখন ঘটছে না। জালিয়াতি, যোগসাজশ ও শক্তি প্রয়োগের মত ঘটনা ঘটার আর কোন সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে ৪৪টি ব্যাংকের প্রায় ৩ হাজার শাখা ই-জিপিতে দরপত্র দলিল ক্রয় ও নিবন্ধন সংক্রান্ত পেমেন্ট সেবার জন্য যুক্ত আছে।
 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT