রবিবার, ০৫ মে ২০২৪ ২২শে বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
অপেক্ষাকৃত কমদামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে খামারি ও কৃষকরা
প্রকাশ: ১০:১৪ am ১৯-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:১৮ am ১৯-০৮-২০১৭
 
 
 


বন্যায় পশুখাদ্য ও বাসস্থান সঙ্কটের কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে অনেক খামারি ও কৃষক। মধ্য অঞ্চলে গরু উত্পাদনের অন্যতম জেলা সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ বিস্তৃত অঞ্চলে খামারি ও কৃষকরা নিজেদের গরু বিক্রি করছে কমমূল্যে। তারা জানিয়েছে, বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে, গরু রাখার জায়গা নেই। পশুখাদ্যের মূল্য দ্বিগুণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ হয়েছে। এ অবস্থায় অপেক্ষাকৃত কমদামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে খামারি ও কৃষকরা। এই প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পশুহাটগুলোতে। অনেক স্থানে ঈদের আর মাত্র দুই সপ্তাহ সময় থাকলেও কোরবানির পশুহাট জমে ওঠেনি। জমে ওঠেনি দেশের সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু সরবরাহকারী জেলা কুষ্টিয়ার গ্রামের হাটগুলোও। সেখানে খামারি ও কৃষকদের মধ্যে গরুর দাম পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলার বৃহত্তর হাট বালিয়াপড়ায় এখনও বেপারিরা পুরোদমে গরু কেনা শুরু করেনি বলে জানিয়েছে কুষ্টিয়ার একাধিক খামারি। সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের গরু খামারি জহুরুল ইসলাম জানান, গতকাল স্থানীয় উজানগ্রামের হাট ছিল। সেখানে গরু উঠলেও বেপারিরা গরু তেমন কেনেনি। দামও কম ছিল। যারা কিনছে তারা গরুর মাংসের ওজন দেখে কিনছে যেন কোরবানির ঈদের আগে বিক্রি না হলে পরে মাংস বিক্রি করে লাভ করতে পারে। ফলে কোরবানির গরু কেনা তেমন চোখে পড়েনি। বেপারিরা বলছে বন্যার কারণে গরুর বাজার কেমন হবে সেটা নিয়ে তারা শঙ্কায় আছে তাই আগে গরু কিনে লোকসান দিতে রাজি না। নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার চকবনমালি গ্রামের কৃষক সোহাগ হোসেন জানান, বদলগাছিতে বন্যার পানি গ্রামে ঢুকে পড়ায় গরুর খাবারের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে। গরিব কৃষক খাবার কিনতে না পেরে বিক্রি করে দিচ্ছে গরু। নওগাঁর বন্যার আগে ৮০ হাতা বিছালির দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এখন সেটার দাম ৫০০ টাকা। তাহলে কে এত টাকা দিয়ে গরুকে খাওয়াবে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানায়, দেশে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু রয়েছে। অধিদফতরের তথ্যে দেখা যায় গত বছর কোরবানির ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি করা হয়েছিল। সারা দেশে গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়া রয়েছে প্রায় ৫ কোটি। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ২ কোটি ৩৮ লাখ এবং ছাগল-ভেড়া ২ কোটি ৬০ লাখ। আর বর্তমানে দেশের বাজারে কোরবানির ঈদে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার পশু। জেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। শেষ সময়ে মোটাতাজাকরণে কৃত্রিম হরমোন বা ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার বন্ধে খামারি পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক আইনুল হক বলেন, সারা দেশেই কৃষক ও খামারিদের মধ্যে কোরবানির গরু পালনে ব্যাপক উত্সাহ রয়েছে। এবারের ঈদে পশুর কোনো ধরনের ঘাটতি হবে না। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এ সময় সতর্ক রয়েছেন। নিরাপদ গরু উত্পাদনে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা কৃষকদের বাড়ি ও খামারে গিয়ে তদারকি করছেন। নারায়ণগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক শরীফ উদ্দিন সবুজ জানান, জেলায় গত দুই বছর কোরবানির ঈদে ভারতীয় গরু দেশে আসেনি। এ সুযোগ নিয়ে প্রতি বছর বাড়ছে খামারির সংখ্যা। বাড়ছে খামারে পালিত গরুর সংখ্যা। এ বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রায় ১৭ হাজার গরু নিয়ে প্রস্তুত আছে খামারিরা। কিন্তু বন্যা তাদের গরুর দাম নিয়ে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। নগরীতে পানি ঢুকে যাওয়ার মতো বড় বন্যা হলে গরুর দাম পড়ে যাবে বলে আশঙ্কায় রয়েছে খামারিরা। বন্যার আশঙ্কায় অনেক খামারিই আগেভাগে অপেক্ষাকৃত কমদামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। এবারের তুলনায় গতবার এ সংখ্যাটি ছিল ১৪ হাজার-জানালেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহীদুজ্জামান। বন্যার কারণে এবার গরু কোরবানির সংখ্যা কম হবে বলে মনে করছেন সারা দেশে খামার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান সাদেক। তিনি বলেন, বন্যা হলে শহরে তো কোরবানির পরিমাণ কমে যাবেই। তবে এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলায় যে বন্যা হয়েছে তার কারণেও কোরবানির পরিমাণ কমে যাবে। গ্রামে গ্রামে অনেক অবস্থাপন্ন কৃষকও দেখা যায় কয়েকজন মিলে একটা ছোট আকারের গরু কোরবানি দিচ্ছে। কিন্তু এখন বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের থাকারই উপায় নেই। কোরবানি দেবে কীভাবে। পানি নেমে গেলেও দেখা যাবে কোরবানির জন্য যে বাজেট রেখেছিলেন সে বাজেট হয়তো বাড়িঘর মেরামতে বা আত্মীয়-স্বজনকে সহায়তায় ব্যয় করছেন। তিনি বলেন, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষক, খামারিরা আমাদের ফোন দিয়ে তাদের করুণ অবস্থার কথা জানাচ্ছে। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, জেলায় আসন্ন কোরবানির ঈদে এবার চাহিদা মেটাবে দেশীয় জাতের গরু। পশুর বাজারে পর্যাপ্ত দেশি গরু পাওয়া যাবে। ফলে এবার ভারতীয় গরু কিনে চিন্তায় পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জানান, আসন্ন ঈদুল আজহায় ৫ লাখ ৯১ হাজার পশু (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) কোরবানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫১ হাজার বেশি। গত বছর ৫ লাখ ৪০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার ১০ শতাংশ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে, গত ২১ জুলাই পর্যন্ত নগরী ও ১৪ উপজেলায় কোরবানিযোগ্য ৫ লাখ ২ হাজার পশু মজুদ রয়েছে। এদিকে দাম কিছুটা বেশি হলেও দেশি গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে বেড়ে ওঠা গরুর মাংসের স্বাদ বেশি। এ ছাড়া স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ওষুধ ও ইঞ্জেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা পশুর মাংস খেলে ক্যানসার, লিভার ড্যামেজ, বিকলাঙ্গ ও হরমোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT