শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
কাঁদলেন তুর্কি ফার্স্ট লেডি
প্রকাশ: ১১:০৩ am ০৮-০৯-২০১৭ হালনাগাদ: ১১:০৬ am ০৮-০৯-২০১৭
 
 
 


মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা শুনে কাঁদলেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ে অবস্থিত নিবন্ধিত শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেলে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার থেকে সড়কপথে তিনি কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেন। ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। এ সময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এমিনি এরদোগান কথা বলেন নির্যাতন ও সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা কয়েক ধর্ষিত নারী ও গুলিবিদ্ধ পুরুষের সঙ্গে। তিনি রোহিঙ্গাদের কাছে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসার কারণ এবং নির্যাতনের ধরন সম্পর্কে জানতে চান। রোহিঙ্গারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের কথা জানায়। এ সময় এমিনি এরদোগান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূর জানান, নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরে বৈঠকের পর তুরস্কের ফার্স্ট লেডি অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তিতে গেলে রোহিঙ্গারা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারা নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে। এ সময় এমিনি এরদোগান রোহিঙ্গাদের কান্না দেখে তিনিও কেঁদে ফেলেন। বুকে জড়িয়ে ধরেন অনেক রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে। দুপুরে কুতুপালংয়ে কথা হয় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া মিয়ানমারের মংডুর তুলাতলি গ্রামের বাসিন্দা শফিকা বেগমের (২৫) সঙ্গে। তার ডান হাতে গুলি লেগেছে। মাথায় গভীর আঘাতের চিহ্ন। শফিকা জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোরবানির ঈদের দু’দিন তাদের গ্রামে ঢুকে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তার স্বামী জামাল হোসেনসহ পরিবারের ১০ সদস্যকে। ছোট বোন রশিদা বেগমকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তার কোলে থাকা এক মাসের শিশুটিকেও গুলি  করে হত্যা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তিনি নদী সাঁতরে কোনো মতে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।  শফিকার সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার রশিদা বেগমের স্বামী মো. হোসেন (৩০)। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের দু’দিন আগে হঠাত্ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে হানা দেয়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় সব কিছু। যাকে সামনে পায় তাকেই গুলি করতে শুরু করে। তার স্ত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এক মাসের শিশুটিকে রেহাই দেওয়া হয়নি। গুলির সময় তিনি গড়াগড়ি দিতে দিতে কোনো মতে নদীর পানিতে নেমে পড়েন। পরে নদী সাঁতরে চলে আসেন বাংলাদেশে। এখানে আসার পর কুতুপালংয়ে দেখা হয়েছে তার স্ত্রীর বড় বোন শফিকার সঙ্গে। বৈঠকে অংশ নেওয়া গুলিবিদ্ধ মো. আয়াজ (১৭) নামে এক কিশোর জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি করার সময় সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় হাতে ও বুকের একপাশে তিনটি গুলি লাগে। ওই অবস্থাতেই সে পালিয়ে এসেছে। পরে উখিয়ায় এমএসএফ হল্যান্ড হাসপাতালে চিকিত্সা নেয়। বৈঠকের পর তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান কুতুপালংয়ে নিবন্ধিত শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেন। নির্যাতিত কিছু রোহিঙ্গার হাতে তুলে দেন ত্রাণসামগ্রী। পরে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ যা করছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ মানবিক বিপর্যয় থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে তুরস্ক সরকার বাংলাদেশের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে তুরস্কের সহায়তাও অব্যাহত রাখা হবে। ‘তুরস্ক ৩০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে’ উল্লেখ করে এমিলি এরদোগান আরও বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা বিষয়ে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করছেন। এ সময় তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসগলু বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে আক্রমণের শিকার হচ্ছে। তাদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য যা করছে তার জন্য তুরস্কের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাই। তুরস্ক এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে চায়। ভবিষ্যতেও রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তুরস্ক অবশ্যই বাংলাদেশের পাশে থাকবে। কারণ রোহিঙ্গারা অত্যন্ত অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। আগামী শনিবার কাজাকিস্তানের রাজধানী আস্তানায় ওআইসির একটি শীর্ষ সম্মেলন হবে। সেখানে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হবে। দু’সপ্তাহ পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের আলোচনার সাইডলাইনে রোহিঙ্গা বিষয়ে একটি বৈঠক হবে। সেখানে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব, সাবেক মহাসচিব কফি আনান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমরা তাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছি।  এ সময় অন্যদের মধ্যে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন, কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ রেজাউল করিম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি কক্সবাজার ইউনিটের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT