সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার দুই বছর তিন মাস পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসলেন আরিফুল হক চৌধুরী। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় তিনি নগরের কুমারপাড়ার বাসা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হেঁটে নগর ভবনে পৌঁছান। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। বাসা থেকে হেঁটে নগর ভবনে যাওয়ার সময় মেয়রকে রাস্তার দুই পাশ থেকে সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তাঁকে ফুলের মালা দিয়েও শুভেচ্ছা জানানো হয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আরিফুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মেয়াদের মধ্যবর্তী সময়টা কেটে গেল। এখন শেষ দিকে এসে দায়িত্ব ফিরে পেয়েছি। নতুন করে দায়িত্ব পালনে আমি সকলের সহযোগিতা চাই।’
জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে মন্ত্রণালয় থেকে এভাবে বরখাস্ত করাটাও যে জনরায়বিরোধী—এ বিষয়টি উচ্চ আদালতের আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম, তা পূরণে কাজ করতে চাই। বিনা দোষে আমাকে ২৭ মাস জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল।’
দায়িত্ব গ্রহণকালে মহানগর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হক, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, পেশাজীবী সমন্বয়ন পরিষদের আহ্বায়ক আতাউর রহমান পীরসহ নগরের বিভিন্ন বয়সী ব্যক্তিসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ছিলেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হয়ে দুই বছর চার দিন কারাভোগের পর গত ৪ জানুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান আরিফুল হক চৌধুরী। কারামুক্ত হয়ে মেয়র পদে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি। উচ্চ আদালতের রায়ে মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান আরিফুল। পরে গত ৩০ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণসংক্রান্ত চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছায়।
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে নাম আসার পর ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এক আদেশে মেয়র আরিফুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আরিফুল রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ গত ১২ মার্চ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১০ বছর পর তৃতীয় পর্যায়ের তদন্ত শেষে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেটের মেয়র আরিফুর হক চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হলে ২৮ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ গিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাবন্দী হয়েছিলেন আরিফুল।