কিডনি বিকল হলে রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার একমাত্র উপায় হলো ডায়ালাইসিস। বর্তমানে বাংলাদেশে এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করতে যাচ্ছে রাজধানীর ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল। কম খরচে সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিতে আগামী সপ্তাহ থেকে হাসপাতালের গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে শুরু হতে যাচ্ছে এই সেবা কার্যক্রম।
আজ শনিবার হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই তথ্য জানানো হয়। সভায় বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্রের মাইক্রোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবদুল হামিদ প্রমুখ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি রোগীদের প্রতি মাসে ডায়ালাইসিস করতে খরচ হয় ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। এতে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা খরচের ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হয়। সে অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প আয়ের রোগীদের জন্য মাত্র এক হাজার ১০০ টাকায় ডায়ালাইসিস করার উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আলোচনা সভায় বক্তারা জানান, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এই সেন্টারে প্রতি সেশনে এক হাজার ১০০ টাকায় দরিদ্র রোগীরা ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পাবেন। মধ্যবিত্তদের জন্য প্রতি সেশনে খরচ পড়বে দেড় হাজার টাকা। আর উচ্চবিত্তদের জন্য সেশনপ্রতি খরচ তিন হাজার টাকা। ডায়ালাইসিস সেন্টারে থাকছে ২৪ ঘণ্টা সেবার সুযোগ। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সেন্টারে আছে ১০ শয্যার একটি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
বাংলাদেশে ডায়ালাইসিসের বাস্তবতা
আলোচনা সভা থেকে জানানো হয়, বর্তমানে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে আট লাখ রোগীর ডায়ালাইসিসের দরকার। চিকিৎসা করাতে সক্ষম প্রায় ৩০ হাজার কিডনি রোগী প্রতিবছর ডায়ালাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতির আওতায় আসেন। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পারায় প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী মারা যান।
বক্তারা আরো জানান, বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস মেশিন আছে প্রায় ৬৫০টি। এর উল্লেখযোগ্য অংশই বিকল। এমন বাস্তবতায় দরিদ্র রোগীদের সেবায় এগিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে গণস্বাস্থ্য নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
কম খরচে ডায়ালাইসিস সেবা
ডায়ালাইসিসের ব্যয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রোগীদের ভোগান্তির কিছু বেদনাদায়ক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো ভালো সেন্টারে ডায়ালাইসিস করতে তিন থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। ভারতে প্রতিবার ডায়ালাইসিসে খরচ হয় এক হাজার রুপি। পাকিস্তানের করাচিতে সিন্ধ ইনস্টিটিউট অব ইউরোলজিক্যাল সায়েন্সেস ও সিন্ধ হাসপাতালে করাচিবাসীর জন্য বিনা খরচে ২৪ ঘণ্টা ডায়ালাইসিসের সুবিধা রয়েছে।
বক্তারা আরো জানান, এশিয়ার তাইওয়ান, জাপান ও ইরান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, উত্তর আমেরিকার কানাডা, উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলের কিউবার সব নাগরিক জাতীয় স্বাস্থ্যবিমার অধীনে বিনাখরচে সারা জীবন ডায়ালাইসিস করার সুবিধা পান। তবে বাংলাদেশে সেই খরচ অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগীরা তিন বছরের বেশি এই খরচ বহন করতে পারেন না।
অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডায়ালাইসিসের জন্য বিশুদ্ধ পানির খুব প্রয়োজন। তা না হলে রোগীর বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমরা এখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করছি।’
নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বলেন, ‘কিডনি বিকল হওয়ার শেষ পর্যায়ে বা হঠাৎ কিডনি বিকল হওয়ার ক্ষেত্রে ডায়ালাইসিস একটি রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো বের করে দেওয়া হয়। খুব সতর্কতার সঙ্গে না করা হলে ডায়ালাইসিস করার সময়ই রোগী স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন। তবে আমাদের এখানে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করা হচ্ছে।’ তিনি আরো জানান, ‘এখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা কাজ করছেন। এ ছাড়া একজন ক্লিনিক্যাল ডায়েটেশনিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ডায়ালাইসিসের রোগীদের ডায়েট (পথ্য) চার্ট করার জন্য। এ ছাড়া রোগীদের জন্য ভালো মানের খাবারেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সব কিছু মিলে এখানে খরচ খুব কম পড়বে।’
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ডা. তৌকির করিম। প্রশ্নোত্তর পর্বের একপর্যায়ে ডায়ালাইসিস সেন্টারের সমন্বয়ক ডা. মহিবুল্লাহ জানান, সেন্টারে এসে একজন রোগীকে শুরুতে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম দেখে রোগীকে চারটি (উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র) ভাগে ভাগ করা হবে। অতিদরিদ্র রোগীদের পাঁচটি শয্যায় বিনামূল্যে ডায়ালাইসিস করা হবে।