চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এক দোতলা বাড়ি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬ নামে দীর্ঘ ১৯ ঘণ্টার অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে আত্মঘাতি বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার ‘জঙ্গির’ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, চারজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন আত্মঘাতী। তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণে আত্মঘাতী হন। তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন পুরুষ।
সবশেষ এক জঙ্গির মরদেহ পাওয়া যায় আস্তানার ভেতরে। সেখানে একটি মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে তিন জঙ্গি নিহতের খবর সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ঢাকার অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আব্দুল মান্নান।
এছাড়াও অভিযানে জঙ্গিদের হাতে জিম্মি থাকা ১৮জনকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে পুলিশের সোয়াত টিমের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রামে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে জঙ্গি আস্তানার ভেতরে আটকে পড়া পরিবারগুলোকে রক্ষায় ও জঙ্গিদের আটকে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৬টা ২০ মিনিটে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ অভিযান শুরু করে সোয়াত, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, র্যাব ও পুলিশের সম্বন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বিতল ভবনটিকে প্রতি ফ্লোরে চারটি করে ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল। বাকি ফ্ল্যাটগুলোতে ৭টি পরিবার বাস করতো। বুধবার দুপুরে পুলিশ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করার পর ভবনে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা এতে আটকা পড়ে।
এর আগে বুধবার (১৫ মার্চ) রাত ৮টা ১০ মিনিটে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সড়ক থেকে কয়েকশ গজ দূরে আস্তানার দিকে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। এসময় হ্যান্ডমাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাতেও শোনা গিয়েছিল পুলিশকে।
দুপুরে চৌধুরীপাড়ার ছায়ানীড় ভবনের নিচতলায় ওই আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে তখনও তাদের ওপর তিনটি হাতবোমা ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। এতে সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেলসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পুলিশ পিছু হটে পুরো আস্তানা ঘিরে রাখে।
এর আগে দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে জঙ্গি দম্পতিকে তাদের এক শিশুসন্তান সহ আটক করা হয়। সাধন কুটিরের মালিকই মূলত তাদের ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এরপর দুপুরেই তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চৌধুরীপাড়ার আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়েছিল পুলিশ।
এরপর চৌধুরীপাড়ায় দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরুর আগে পাঁচটি সিএনজি অটোরিকশায় করে ছায়ানীড় ভবনের আশপাশের কিছু বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। ওই ভবনের নিচতলার একটি বাসা আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছিল জঙ্গিরা।
দুটি আস্তানাই নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র সংগঠন জেএমবির বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে একটি আস্তানা থেকে আটক হওয়া নারী-পুরুষ জেএমবির সদস্য বলেও তিনি জানিয়েছেন।