মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী দমনে নতুন নির্দেশনা জারির পর গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নির্দেশনায় অভিবাসন আইনের শক্ত প্রয়োগের কথা ঘোষণার পর বৈধ কাগজপত্রহীন মানুষদের মাঝে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিরাও ভুগছে বহিষ্কার ও ধরপাকড়ের আতঙ্কে।
গত মঙ্গলবার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের মন্ত্রী জন কেলির স্বাক্ষরিত যে নীতিমালা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি ছাড়াও যাঁরা নাগরিক কল্যাণ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে মিথ্যা সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যবহার করেছেন বা সড়ক পরিবহন আইন ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, এমন অবৈধ অভিবাসীরাও বহিষ্কৃত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্র বিহীন বাংলাদেশিদের কোন সঠিক সংখ্যা নেই। তবে ধারণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় এক লাখের মত। শুধু নিউ ইয়র্কেই বসবাস করছেন ৫০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, শিকাগো, জর্জিয়া, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন বড় বড় শহরেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ বাংলাদেশি।
নিউ ইয়র্কে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হয়েছে। এসব আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই। গত বছর দুই দফায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি অভিবাসীদের বহিষ্কৃত করা হয়েছিল, তাঁদের ব্যাপারে আদালত রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্পের বর্তমান বহিষ্কারাদেশের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে চাকরি ত্যাগ অথবা বাসস্থান বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা 'ড্রাম'।
ড্রাম এক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিবাসী বাংলাদেশিরা যাঁরা বহিষ্কারের আশঙ্কায় ভীত, তাঁদের সাহায্যের জন্য তাঁরা জরুরি আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের অপরাধের বিষয়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত এমন অভিবাসীদের ব্যক্তিগত পরিচয় গোপন রাখার যে নিয়ম বর্তমানে চালু রয়েছে, তা রদ করার এবং অভিবাসীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশকে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন নাগরিক অধিকার ইউনিয়নের (এসিএলইউ) নিউ ইয়র্ক শাখার নির্বাহী পরিচালক ডোনা লিবারম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন বহিষ্কারাদেশ বাস্তবায়িত হলে নিউ ইয়র্ক শহরে হাজার হাজার অভিবাসী পরিবার বিপদের মুখে পড়বে। পরিবারের সদস্যরা একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।
নিউ ইয়র্কের ইউএস সুপ্রিম কোর্টের এটর্নি নাজমুল আলম কালের কন্ঠকে বলেন, শুধু নিউ ইয়র্কেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশিরা ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী দমনে নতুন নির্দেশনা জারির পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারনার শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ২০ থেকে ৩০ লাখ অভিবাসী, যাঁরা 'বড় ধরণের' অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, এমন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বহিষ্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু নতুন নির্দেশ অনুযায়ী দেশের অধিকাংশ কাগজপত্রবিহীন অভিবাসী বহিষ্কারের আওতায় পড়তে পারেন। অভিবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের তরফ থেকে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রবল প্রতিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।