মোক্ষম সময়ে জ্বলে উঠলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর ফিরতি লেগে দু-দুবার পিছিয়ে পড়া দলকে সমতায় ফেরালেন। করলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। দলের সেরা তারকার অসাধারণ নৈপুণ্যে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচটি জিতেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ।
মঙ্গলবার রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালের ফিরতি পর্বের ম্যাচটি ৪-২ গোলে জিতেছে রিয়াল। দুই লেগ মিলিয়ে তাদের জয় ৬-৩ ব্যবধানে। প্রথম পর্বে ২-১ গোলে জিতেছিল জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।
দারুণ এই হ্যাটট্রিকে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সেঞ্চুরি করলেন রোনালদো। গত সপ্তাহে প্রথম লেগে বায়ার্নের মাঠে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গোলের শতক করেন চারবারের বর্ষসেরা তারকা।
নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া বায়ার্নের বিপক্ষে রিয়ালের চতুর্থ গোলটি করেন বদলি নামা মার্কো আসেনসিও। বায়ার্নের একমাত্র গোলদাতা রবের্ত লেভানদোভস্কি।
প্রতিপক্ষের উপর রিয়ালের টানা আক্রমন আবার কখনও বা স্বাগতিকদের সীমানায় বায়ার্নের একচেটিয়া প্রভাব। এভাবে এগিয়ে চলা ম্যাচের ২৬তম মিনিটে দানি কারবাহালের আচমকা শটে এগিয়ে যেতে পারতো বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান মানুয়েল নয়ার।
দুই মিনিট পর এই অর্ধের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি পায় জিদানের দল। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল দাভিদ আলাবা-মাটস হুমেলসরা বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ফাঁকায় পেয়ে যান সের্হিও রামোস। তার জোরালো শট গোললাইনের কাছ থেকে ফেরান জেরোমে বোয়াটেং।
৩৭তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন রোনালদো। বাঁ-দিকে ছিলেন করিম বেনজেমা; কিন্তু পাস না দিয়ে নয়ারের বরাবর শট মেরে বসেন পর্তুগিজ ফরোয়াড।
শুরু থেকে বায়ার্ন বেশ কয়েকটি ভালো আক্রমণ করলেও প্রতিবারই শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেলে রবের্ত লেভানদোভস্কি-আরিয়েন রবেনরা। বিরতির আগে তারা মোট আটটি শট নেয়; কিন্তু তার কোনোটিই ছিল না লক্ষ্যে।
প্রথমভাগের হতাশা কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে আক্রমণে উঠতে থাকে অতিথিরা। ৫০তম মিনিটে বিনা বাধায় রবেনের নেওয়া হেড গোললাইন থেকে হেড করে ফেরান মার্সেলো।
তিন মিনিট পরেই লেভানদোভস্কির সফল স্পট কিকে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। বাঁ-দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা রবেনকে ব্রাজিলের ডিফেন্ডার কাসেমিরো ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি।
চোট কাটিয়ে ফেরা পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানদোভস্কির এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা অষ্টম গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৯। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার এবারের আসরে ১১ গোল নিয়ে শীর্ষে আছেন বার্সেলোনার লিওনেল মেসি।
এগিয়ে গিয়ে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বায়ার্ন। ৫৭তম মিনিটে কিছুটা কঠিন হলেও আর্তুরো ভিদাল সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যবধান দ্বিগুণ করার। কিন্তু ক্রসবারের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারেন চিলির এই মিডফিল্ডার।
শুরু থেকে নিজেকে তেমন মেলে ধরতে না পারা বেনজেমাকে ৬৪তম মিনিটে তুলে নেন জিদান, নামান মার্কো আসেনসিওকে।বলতে গেলে ধারার বিপরীতেই ৭৬তম মিনিটে সমতায় ফেরে রিয়াল। ডান দিক থেকে কাসেমিরোর ক্রসে হেড করে বল জালে পাঠান রোনালদো।
স্বাগতিকদের সমতায় ফেরার স্বস্তি অবশ্য এক মিনিটও স্থায়ী হয়নি। ৩৬ সেকেন্ড পরেই আত্মঘাতী গোল খেয়ে বসে তারা। ডি-বক্সের মধ্যে বল নিজেদের আয়ত্তেই নিয়ে ফেলেছিল; কিন্তু রামোসের পায়ে টোকা লেগে বল চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে।
৮৪তম মিনিটে আসেনসিওকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ে ভিদাল। চার মিনিট পর গোলদাতা লেভানদোভস্কিকে তুলে নেন কার্লো আনচেলত্তি।
অতিরিক্ত সময়ের অষ্টম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন দগলাস কস্তা। কিন্তু তার কোনাকুনি শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আসেনসিওর নীচু কোনাকুনি শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান নয়ার।
এর কিছুক্ষণ পরেই ফের কাঙ্ক্ষিত সমতাসূচক গোল পেয়ে যায় রিয়াল। ১০৪তম মিনিটে রামোসের উঁচু করে বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়ে নীচু হাফ-ভলিতে জালে পাঠান রোনালদো। অফসাইডের আবেদন করে বায়ার্নের খেলোয়াড়েরা; কিন্তু রেফারি গোলের বাঁশি বাজান। টিভি রিপ্লেতেও দেখা যায়, অফসাইডে ছিলেন রোনালদো।
এর পাঁচ মিনিট পরেই হ্যাটট্রিক পূরণ করেন রোনালদো। দুজনকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া মার্সেলোর নি:স্বার্থ পাস পেয়ে ডান পায়ের শটে ফাঁকা জালে বল পাঠান তিনি।এবারের আসরে রোনালদোর এটা সপ্তম এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ১০০তম গোল। ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় তার এটা ১০৩তম গোল।
তিন মিনিট পর ব্যবধান আরও বাড়িয়ে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন আসেনসিও। ডি-বক্সের মধ্যে থেকে নীচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন স্পেনের এই মিডফিল্ডার।
আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে হারেনি লেস্টার সিটি। কিন্তু প্রথম লেগের জয়ে শেষ চারে উঠেছে গতবারের রানার্সআপরা।
মঙ্গলবার রাতে লেস্টার সিটির মাঠে ফিরতি লেগের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছে। দুই লেগ মিলিয়ে আতলেতিকোর জয় ২-১ ব্যবধানে।
২৬তম মিনিটে সাউলের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অতিথিরা। ৬১তম মিনিটে জেমি ভার্ডি সমতা টেনে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ক্রেইগ শেকস্পিয়ারের দল।