ফাইনালের মঞ্চে কী দুর্দান্তভাবেই না জ্বলে উঠলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। পর্তুগিজ এই তারকা ফরোয়ার্ডের জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ধরে রেখে ইতিহাস গড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
প্রথমার্ধে রোনালদো রিয়ালকে এগিয়ে নেওয়ার পর সমতা ফিরিয়েছিলেন মারিও মানজুকিচ। দ্বিতীয়ার্ধে কাসেমিরোর গোলে আবার এগিয়ে যাওয়ার পর রোনালদোর দ্বিতীয় গোলে দ্বাদশ শিরোপা জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রিয়ালের। শেষ মুহূর্তে মার্কো আসেনসিওর গোলে বড় জয়ই তুলে নেয় স্পেনের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি।
কার্ডিফের প্রিন্সিপালিটি স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে শুরুটা ভালো করে অবশ্য ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। চতুর্থ মিনিটে হিগুয়াইনের দূরপাল্লার শট ফেরাতে একটু বেগ পেতে হয় কেইলর নাভাসকে। দুই মিনিট পর মারিও মানজুকিচের ক্রসে মিরালেম পিয়ানিচের দূরপাল্লার জোরালো শট ডানে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন কোস্টা রিকার এই গোলরক্ষক।
সামলে উঠে আক্রমণে উঠে রিয়ালও। ২০তম মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন নক আউট পর্বে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। দানি কারভাহালকে ডানে বল পাঠিয়ে সামনে এগিয়ে যান; বল ফেরত পেয়ে নীচু কোনাকুনি শটে জালে পাঠিয়ে এবারের আসরের একাদশ গোলটি করেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। বল জালে যাওয়ার আগে বোনুচ্চির পায়ে হালকা ছোঁয়া লাগে, কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক জানলুইজি বুফ্ফনের।
এ নিয়ে ইউরোপ সেরার আসরে তিনটি ফাইনালে গোল পেলেন রোনালদো। প্রথম দল হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫০০ গোলও হলো রিয়ালের।
ইউভেন্তুসের সমতায় ফিরতেও বেশি দেরি হয়নি। ২৭তম মিনিটে অসাধারণ এক গোলে গ্যালারিতে ইউভেন্তুস সমর্থকদের মাতিয়ে তোলেন মানজুকিচ। হিগুয়াইনের উঁচু পাস বুক দিয়ে নামিয়ে ওভারহেড কিকে নাভাসের মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠান ক্রোয়েশিয়ার এই ফরোয়ার্ড।
বিরতির পর খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিন মিনিটের মধ্যে রিয়ালের দুই গোলে সমর্থকদের উৎসব শুরু হয়ে যায়। ৬১তম মিনিটে ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকে ব্রাজিলের মিডফিল্ডার কাসেমিরোর শট সামি খেদিরার পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। আর তিন মিনিট পর ডান দিকের বাই লাইন থেকে মদ্রিচের ক্রসে কাছ থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো।
এই আসরে ১২টি গোল করে বার্সেলোনার লিওনেল মেসিকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়ে গেলেন রোনালদো। এই গোলে ক্লাব আর দেশ মিলিয়ে ৬০০টি গোলের মাইলফলকও স্পর্শ করলেন চার বারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার।
৮৪তম মিনিটে বদলি হিসেবে নামা হুয়ান কুয়াদ্রাদো দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা অনেকটা ফিকে হয়ে যায় মাস্সিমিলিয়ানো আল্লেগ্রির দলের।
রোনালদোর হ্যাটট্রিক না হলেও রিয়ালের বড় জয় নিশ্চিত হয় ইসকোর বদলি হিসেবে নামা আসেনসিওর গোলে। গোলের মূল কৃতিত্ব অবশ্য মার্সেলোর। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গোলের জন্য বল বানিয়ে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের এই ডিফেন্ডার।
গত বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর রিয়ালকে টানা দুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতালেন জিদান। এ মৌসুমে ২০১২ সালের পর লা লিগার শিরোপাও পুনরুদ্ধার করেছে রোনালদোরা।
প্রতিপক্ষ কোচ আল্লেগ্রির ট্রেবল জেতা আর হলো না। ১৯৯৬ সালে শেষবারের মতো শিরোপা জেতার পর পাঁচবার ফাইনালে উঠে হারলো ইউভেন্তুস।
সবচেয়ে বড় হতাশাটা হয়তো ম্যাচ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়া বুফ্ফনের। ফাইনালের আগে টুর্নামেন্টে মাত্র ৩ গোল খাওয়া এই ইতালিয়ানের প্রতিরোধ ভেঙে পড়লো দুর্দান্ত রিয়ালের সামনে। তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেও একবারও শিরোপার দেখা পেলেন না বর্ষীয়ান এই গোলরক্ষক।