অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আবগারি শুল্ক নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে। এটা নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে, তখন বাজেট পাস করার সময় শুল্কের হার পরিবর্তন করা হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি শুল্ক নামটা ঠিক যায় না। তাই এর নাম পরিবর্তন করে ইনকাম ট্যাক্সের আদলে কিছু একটা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সচিবালয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন তার বাজেট প্রস্তাবে ব্যাংক হিসাবের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে। আর ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। বর্ধিত আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, আমাদের আর্থিক খাত নিয়ে বাজারে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে বাজেট দেওয়ার পরে সমালোচনা উচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। অনেক সময় হয় কী-যখন আর কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন একটা কিছু বের করতে হয়। সেটা এবার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর ‘সো কল্ড’ আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়। নাম ঠিক নয় মনে হয়, নামটা আমরা পরিবর্তন করব। ইনকাম ট্যাক্সের আদলে কিছু একটা নাম দেওয়া হবে। যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তারা বহু দিন থেকেই এ শুল্ক দিয়ে থাকেন উল্লেখ করে মুহিত বলেন, এবার রেট একটু বেড়েছে। এর পাশাপাশি সুযোগও বেড়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা থাকলেই দিতে হতো। এবার আমরা একেবারে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ফ্রি করে দিয়েছি। তারপরও এটা নিয়ে বাজারে খুবই সমালোচনা হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যেই বলেছি, বাজেটে তো প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা যখন পাস হবে তখন অনেক কিছুতে পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে এ ধরনের রেট ৮০০ হল না ৫০০ হল এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে। এটা পার্লামেন্টে বলতে গেলে ২৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জনগণ যেন একটু স্বস্তি পায় সে জন্য আজকেই বললাম। টাকা পাচার বন্ধে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা বাড়ছে বেশ কিছু আইন বা বিধির কারণে। তাই টাকা পাচার বন্ধে অর্থাত্ উত্স বন্ধে আইন বা বিধির সংস্কারসহ বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে জমি কেনাবেচা হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রি করা হয় সরকারের নির্ধারিত মূল্যে। তাই এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত মূল্য তুলে দিয়ে তা বাজারভিত্তিক করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। মুহিত বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে জমি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রি হচ্ছে। এতে একদিকে সরকার প্রকৃত রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে জমির মালিক অর্থের প্রকৃত উত্স দেখাতে পারছে না।