শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
নারী ফুটবল দলকে এগিয়ে নিতে চায় দরিদ্র ঘরের কিশোরী
প্রকাশ: ১২:১৬ pm ০১-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ১২:২০ pm ০১-০১-২০১৮
 
 
 


এস এম জামাল, কুষ্টিয়া: মধ্যবিত্ত বা গরিব ঘরের ছেলে মেয়েরা দিন শেষে একটা স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে যায়। একদিন অনেক বড় হবে, অনেক কিছু করবে।এই স্বপ্ন দেখে তারা। কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের অর্থনৈতিক সমস্যা। তবে তাতে কি লক্ষ্য যদি থাকে বড় হওয়ার। তাহলে যে কোন বাঁধায় জয় করা যায়। এমনি দুই দরিদ্র পরিবারের কিশোরী ফুটবলারের কথা তুলে ধরতেই চেষ্টা করেছেন এই প্রতিবেদক।
দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে নারীরা। বয়সভিত্তিক দল থেকে থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীদের সাফল্য ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে। অনেক হতাশার মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে এই মেয়েরা।
সম্প্রতি সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশি কিশোরিরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী দলে কুষ্টিয়া জেলার দুই কিশোরীও অংশগ্রহন করছে।
এই দুই খেলোয়াড়কে নিয়ে আজকের এই লেখা। 'যাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা' সেই পরিবারের দুই সদস্য হলেও নিলুফা ইয়াসমীন নিলা ও দীপা খাতুন। 
নিলুফা ইয়াসমীন নিলা কুষ্টিয়া শহরের চাঁদ সুলতানা বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।ইতিমধ্যেই তিনি জাতীয় ফুটবল দলের একজন সেরা খেলোয়াড় হিসেবেও পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেছে।
কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আশিক জোয়ার্দ্দারের দুই মেয়ের মধ্যে বড় নীলা। ছোটবোনটি এবার চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী।
আশিক জোয়ার্দ্দার দর্জির কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। থানাপাড়া এলাকার মন্দিরের পিছনে তার বসতবাড়ি। টিনের বেড়া ও ছাউনী বেষ্টিত ঘরেই বেড়ে ওঠা নীলা কখনো ভাবতে পারেনি জাতীয় ফুটবল (কিশোরী) দলে অংশগ্রহণ করবে? বছরখানেক ধরেই খেলছে জাতীয় দলে। 
সম্প্রতি সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশি কিশোরিরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী দলে খেলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এই কিশোরী। গতকাল কথা হয় তার সাথে।উঠে আসে নানান কথা।
তিনি বলেন, খেলাধুলা দেখতে ভালো লাগে।ছোটবেলায় টিভিতে ফুটবল খেলা উপভোগ করতাম। পরবর্তীতে নারীদের ফুটবল খেলা দেখে কেমন যেন মনে হতো এটাও কি সম্ভব। এক সময় দেখি নারীরাও ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ফুটবল খেলায়ও এগিয়ে যাচ্ছে। তাই ষষ্ট শ্রেনীতে থাকাকালীন সময় ফুটবল খেলায় নাম লেখায়।
এরপর অনুর্দ্ধ ১৪ তে কুষ্টিয়া জেলার হয়ে চুয়াডাঙ্গায় ফুটবল টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ করি। এরপর রাজশাহীতেও ফুটবল খেলেছি। প্লানের ক্যাম্পেও অংশগ্রহণের পর জাতীয় দলে অংশগ্রহণ করি। এবারে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশি কিশোরিরা চ্যাম্পিয়ন অর্জন করতে পেরে আমরা পুরো জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা আনন্দিত। এবং আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি ভবিষ্যতে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চান এই কিশোরী। 


আরেক খেলোয়াড় দীপা খাতুন। তিনি এই শিরোপা জেতায় দারুন অবদান রেখেছিলেন।তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট দীপা।


কুষ্টিয়া শহরের চাঁদ সুলতানা বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে পদার্পণ করেছে। ফুটবল খেলোয়াড় হতে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে দীপা।তবুও সেসব জয় করে আজ জাতীয় দলে সুযোগ করে নিয়েছেন কিশোরী দীপা। 
ফুটবলার হওয়ার গল্পের শুরুটা বঙ্গমাতা ফুটবল খেলাম মধ্য দিয়ে।শহরের ৫ নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই স্কুল ভিত্তিক বঙ্গমাতা ফুটবল টূর্নামেন্টে অংশগহ্রণ করেন। এরপর থেকে আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। সুযোগ পেয়ে যায় অনুর্দ্ধ ১৪ কিশোরী ফুটবলে। 
সেই সুবাদে জাতীয় দলে অংশগ্রহণ করে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
দীপা জানান, আমার অভিভাবক আমাকে উৎসাহ প্রদান করলেও পাড়া প্রতিবেশী নাখোশ ছিলেন অনেকেই।
আমাকে নিয়ে নানান কথা বলেছিলো।অথচ এখন তারাই আবার এই শিরোপা জেতার পর আনন্দে উদ্বেলিত।
জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলের নিয়মিত মুখ নিলুফা ইয়াসমীন নিলা ও দীপা খাতুন। এই দুই খেলোয়াড় কুষ্টিয়ার সন্তান, তাই তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ প্রদান করতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদেরতদের পাশে দাড়ানো উচিৎ বলে।যাতে করে ফুটবলের মাধ্যমে তারা দেশের সুনাম বয়ে আনতে পারে। 

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT