জয়পুরহাটের বিভিন্ন এলাকায় আলুখেতে হঠাৎ নাভিধসা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কীটনাশক দিয়েও রোগ সারাতে পারছেন না চাষিরা। ফলে উৎপাদনে ধস নামবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
নাভিধসা রোগে আলুগাছের পাতা মরে যায়, কাণ্ড পচে যায়। মূলত জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায় আলুখেতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের কৃষকেরাও একই খবর দিয়েছেন। তবে সব মিলিয়ে কী পরিমাণ আলুখেত এ রোগের কবলে পড়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলম কবির মুঠোফোনে বলেন, কিছুদিন আগে জেলায় ঠান্ডার প্রকোপ ছিল। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কিছুটা গরম পড়েছে। এ কারণে আলুখেতে নাভিধসা রোগ দেখা দিয়েছে। তাঁরা এ পর্যন্ত এ রোগ নিরাময়ে কৃষকদের করণীয় বিষয়ে সাড়ে তিন হাজার প্রচারপত্র বিলি করেছেন। সিকিউর ও মেলোডি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে যথাক্রমে ২ গ্রাম ও ৪ গ্রাম মিশিয়ে রোদের সময় জমিতে ছিটানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গত মঙ্গলবার ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের বিল হাওয়াই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আলুখেতের অনেক গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে। গাছের কাণ্ডও পচে যাচ্ছে।
তিনি দুই বিঘা জমিতে লাল জাত ও ক্যারেজ জাতের আলু লাগিয়েছেন। বয়স মাত্র ৩০-৩৫ দিন হয়েছে। আরও ৩৫ দিন পর আলু জমি থেকে তোলার সময় হবে। কিন্তু পাঁচ-সাত দিন আগে আলুগাছে নাভিধসা রোগ লেগেছে।
কৃষকেরা বলছেন, কীটনাশক কিনে জমিতে ছিটানোর পরও তাঁরা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কৃষক দুলাল, একই গ্রামের ফয়েজ উদ্দিন ও দুলু মিয়া, পাশের বগদহ গ্রামের বাবলু মিয়াসহ অনেকে বলেন, তাঁরা নানা ধরনের দামি কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করছেন। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
উত্তর মহব্বতপুর গ্রামে নিজের জমিতে কীটনাশক ছিটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জামিরুল ইসলাম। তিনি জানালেন, এক কেজি কীটনাশক ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দামে কিনতে হচ্ছে। তবু ফসল রক্ষা হবে কি না বুঝতে পারছেন না তিনি।
কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন, এই রোগের কারণে এ বছর আলু উৎপাদনে ধস নামবে। এতে করে মারাত্মক লোকসানের মধ্যে পড়বেন তাঁরা। এর মধ্যে অনেকেই আবার বাকিতে বীজসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনেছেন। উৎপাদনে ধস নামলে তাঁদের মাথায় হাত পড়বে।
চাষিদের একজন উত্তর মহব্বতপুর গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, তিনি ৮০ কেজি ওজনের ১০ বস্তা আলুবীজ বাকিতে কিনছেন। প্রতি বস্তার দাম ২ হাজার টাকা। আশা ছিল, আলু তুলে বিক্রি করে বকেয়া শোধ দেবেন। কিন্তু জমিতে আলুর যে অবস্থা তাতে অনেক টাকা তাঁকে লোকসান গুনতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পলি অঞ্চলের ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু।