শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭ই কার্তিক ১৪৩১
Smoking
 
জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাস
প্রকাশ: ০৫:৪৯ pm ২৯-০৬-২০১৭ হালনাগাদ: ০৫:৫৩ pm ২৯-০৬-২০১৭
 
 
 


জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস পাস হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংসদে কণ্ঠভোটে আগামী অর্থবছরের জন্য এ বাজেট পাস হয়। ১ জুলাই শনিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এ বাজেট কার্যকর হবে।

এর আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার অধিবেশনের শুরুতেই মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।

এর আগে সংসদে বাজেটের ওপর ৫৫ ঘণ্টা আলোচনার হয়। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের চতুর্থ বাজেট এটি। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা নবম বাজেট।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১ জুন জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বাজেট অধিবেশনে বাজেট প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে  তা পাস হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ বাজেট।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মঞ্জুরি দাবিগুলো নিষ্পত্তি হওয়ার পর দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নির্দিষ্টকরণ বিল- ২০১৭  উত্থাপন করেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

তবে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা খরচের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই টাকা হচ্ছে মূলত সরকারের গ্রস বাজেট। আর সংসদে পাসকৃত এই বাজেটের পুরো অর্থ কখনো ব্যয় হয় না। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হয়। এই অতিরিক্ত বরাদ্দ আয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। তবে নিট বাজেট হচ্ছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। যা আগামী অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যয় করা হবে।

ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২১৪ কোটি ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দের জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করা হয়। এসব মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৭ জন এমপি মোট ৩৫২টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। স্পিকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে এসব মঞ্জুরি দাবির মধ্যে তারা ৭টি দাবির ওপর আলোচনায় অংশ নেন। তবে সবগুলো ছাঁটাই প্রস্তাবই কন্ঠভোটে নাকচ হয়। পরে ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সরকার ও বিরোধী দলের কন্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়।

অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপনের পর বাজেট পাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্পিকার সরাসরি মঞ্জুরি দাবিগুলো নিয়ে ভোটে চলে যান। এ সময় অর্থ বিভাগ খাত, স্থানীয় সরকার বিভাগ খাত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ খাত, বিদ্যুৎ বিভাগ খাত, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ খাতের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এসব খাতের ওপর সাত এমপি তিন ধরণের ছাঁটাই প্রস্তাব দেন।
 
এগুলো হচ্ছে- নীতি অননুমোদন ছাঁটাই, প্রতীক ছাঁটাই ও মিতব্যয় ছাঁটাই। এসবের ওপর বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম মিলন, কাজী ফিরোজ রশীদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও বেগম রওশন আরা মান্নান। মঞ্জুরি দাবিগুলো নিষ্পত্তি শেষে দুপুর ১টা ৪৮ মিনিটে অর্থমন্ত্রী নির্দিষ্টকরণ বিল- ২০১৭ সংসদে উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

বাজেট পাসের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান।

বাজেট পাসের পর অর্থমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় আয়োজিত ভোজসভায় যোগদানের জন্য সকল সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান। 

অর্থ বিভাগ খাতে ছাঁটাই চান এমপিরা
দাবি নং ৭ অর্থ বিভাগ খাতে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮০ লাখ ৭১ হাজার টাকা দাবির বিপরীতে সাত জন এমপি ছাঁটাই প্রস্তাব করেন। অর্থই অনর্থের মূল, নানাভাবে টাকা বিদেশে পাচার, বেসরকারি ব্যাংক শেষ হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংক খাতে লুটপাটের রাজস্ব কায়েম হয়েছে, অর্থমন্ত্রী খামোখা ব্যাংকিং সেক্টরে ভর্তুকি দিচ্ছে ইত্যাদি অভিযোগ উত্থাপন করে ছাঁটাই প্রস্তাব চান। এসব কারণে ব্যাংক কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয় সংসদে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
স্বাস্থ্য বিভাগ খাতে ১৬ হাজার ২০৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দাবি করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। তবে বাজেট বরাদ্দের বিরোধীতা করে জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান নিম্নমানের। হাসপাতালগুলোর গুনগতমান নেই। এতো অপরিস্কার-অপচ্ছিন্ন হাসপাতাল, রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের অবহেলা বেড়েই চলেছে। তাই সেবার মান অবশ্যই বাড়াতে হবে। অনেক হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়
এ খাতে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী ২৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা মঞ্জুর করার দাবি জানান। এর বিরোধীতা করে ৬ এমপি ছাঁটাই প্রস্তাব করেন। এসময় তারা বলেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। দেশের রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার কাজ ঠিকমতো হয় না। রাস্তাঘাটগুলো ঠিকমতো হচ্ছে না। এসব তদারকি করা দরকার। সারা বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে অথচ ইউনিয়ন পরিষদগুলো এনালগ রয়ে গেছে। মন্ত্রী বরাদ্দ দেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা ঠিকমতো কাজ করেন না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৪ হাজার ৪শ কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা মঞ্জুরি দাবি করা হয়। এর বিপরীতে সাত এমপি ছাঁটাই প্রস্তাব করেন। এসময় তারা বলেন, বিগত ৩ বছর ধরে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছি। হঠাৎ কি করে খাদ্য সংকট হলো। কেন এই অবস্থা। মনিটরিংয়ের সুব্যবস্থা নেই কেন?’ তারা বলেন, ‘খাদ্য মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। দেশে লাগামহীনভাবে চালের দাম বেড়েছে। কেন এমন হলো তা খতিয়ে দেখা দরকার। যে টাকা দাবি করা হয়েছে তা যদি সঠিকভাবে ব্যয় করা হয় তাহলে খাদ্য সংকট অনেকটা কমে যাবে।

জবাবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘চালের দাম বাড়ার কারণেই আমার বিরুদ্ধে এমপিদের এই বিষোদগার বলে বুঝতে পারছি। হাওর অঞ্চলের ফসল সব সময় আগে হয়। এবার হাওরে অকাল বন্যার কারণে ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়েছে। কমপক্ষে ৬ লাখ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলেও কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে। এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ
এ খাতের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৯ হাজার ৬৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন। এর বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন ৫ এমপি। তারা বলেন, নিরাপদ সড়কের জন্য অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পত্রিকা খুললেই দেখা যায়, সড়কে প্রাণহানি ঘটছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ করলেই হবে না, তা নিরাপদ করতে হবে। তারা বলেন, সড়ক নির্মাণের পরে তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এটা মন্ত্রীকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে সড়কের মান যেনো ভালো হয় তা দেখতে হবে। এমপিরা বলেন, মন্ত্রীর ওপর আমরা সবাই খুশি। কারণ তাকে সব সময় মাঠে দেখা যায়। তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় যখন ৮ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৮ হাজার কোটি হয় তখন একটু ভয় হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ খাত
এ খাতের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ১৮ হাজার ৮শ ৯৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন। এর বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন ৬ এমপি। তারা বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ অনেক এলাকায় এখনও তা হয়নি। লোকসান আর ভর্তুকির কথা বলে কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না। গ্রামে দেখা যায় বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। আবার অনেক জায়গায় গ্যাস থাকে না। এ মন্ত্রণালয়ে যেসব ত্রুটি আছে তা ঠিক করা হচ্ছে না বলে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়েছি।

তারা বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সেক্টরে অনেক এগিয়ে গেছে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই সেক্টরে এখনও লুটপাট আর দুর্নীতি রয়েছে। এসব দূর করা দরকার।

এমপিদের বক্তব্যর জবাব দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, ইনশাআল্লাহ সফল হবো। ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদুৎ নিশ্চিত করা হবে। বারবার বলছি, বিদ্যুতায়ন করা কিন্তু সহজ বিষয় নয়। বিদ্যুৎ নিয়ে এখন আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ
এ খাতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ৫ হাজার ২৭০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা মঞ্জুরি দাবি করেন। এর বিরোধীতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন ৬ এমপি। তারা বলেন, পিএসপি ও জেএসসি বাতিল করে এসএসসির ওপর জোর দেয়া দরকার। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে এটা করা প্রয়োজন। তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত করার দাবি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু হচ্ছে না। সামনে নির্বাচন। আমরা এ অবস্থায় কীভাবে নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে যাবো। উন্নয়নের অনেক বাধা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ঠিকাদাররা।

এমপিরা বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের মান বাড়ানো প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও করার দাবি জানানো হচ্ছে। কিন্তু বারবার বলা হচ্ছে টাকা কম। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেকে বলছেন, আমাদের শিক্ষার মান কমেছে। এসব বললে শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হয় আসলে শিক্ষার মান কমেনি। আমাদের প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। সেটা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এর আগে বুধবার সংসদে পাস হয় অর্থবিল ২০১৭। এতে ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে আবগারী শুল্ক কমানো হয়। একইসঙ্গে নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) আইন কার্যকর আগামী ২ বছরের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধের পর অর্থমন্ত্রী তার ওইদিন তার সমাপনি বাজেট আলোচনায় এ ঘোষণা দেন। পরে অর্থবিল ২০১৭ পাসের মধ্য দিয়ে এসব ঘোষণা আইনি ভিত্তি পায়।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT