বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Smoking
 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রণব মুখার্জিকে সাম্মানজনক ডিলিট উপাধি প্রদান
প্রকাশ: ০৪:০৯ pm ১৬-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ০৪:১৮ pm ১৬-০১-২০১৮
 
 
 


ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি চট্টগ্রাম গেছেন। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি চট্টগ্রাম পৌঁছান। 

বিমানবন্দর থেকে প্রণব মুখার্জি রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ হোটেলে পৌঁছান। দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এরপর  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রণব মুখার্জিকে সাম্মানজনক ডিলিট উপাধি দেয়। তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। ডি-লিট গ্রহণ শেষে তিনি দুপুরের আহার গ্রহণ করেন। 

বিকেল ৩টার মধ্যে প্রণব মুখার্জি রাউজান পৌরসভা এলাকায় পৌঁছান।  সেখানে রাউজান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পাশে বিপ্লবী সূর্য সেনের নামে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ জানান এবং মন্তব্য বইয়ে অনুভূতি লিখছেন। এরপর সূর্য সেনের নামে পাঠাগার উদ্বোধন ও কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন।

এরপর প্রণব মুখার্জি যাবেন রাউজানের নোয়াপাড়ায় সূর্য সেনের জন্মভিটায়। সেখান থেকে সরাসরি নগরীতে ফিরে রাত ৮টায় রেডিসন ব্লু  হোটেলে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। ভারতীয় সহকারী হাই কমিশন এই সুধী সমাবেশের আয়োজন করেছে। সেখানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রণব মুখার্জিকে নগরীর চাবি উপহার দেবেন। বুধবার সকালে প্রণব মুখার্জি ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছাড়বেন। যাত্রাপথে নগরীর পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব এবং পরে দামপাড়া পুলিশ লাইনে অস্ত্রাগার পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। ওই অস্ত্রাগারটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় লুট করেছিলেন বিপ্লবীরা। 

এর আগে রোববার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে তিনি বাংলাদেশে আসেন। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) প্রণব মুখার্জি ঢাকায় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, হিটলার মুসোলিনিরা নয়, যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাস নির্মাণ করে গেছেন প্রফেট, ক্রাইস্ট বুদ্ধা। দিগিজয়ী বীরেরা নয়, সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক তথা শিল্পীরা। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এ ছাড়া এসেছিলেন ভারতের ঝাড়খ- রাজ্যের সংসদবিষয়ক মন্ত্রী সরযু রাই, চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি কামাল চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, পরীক্ষা পাসের জন্য দিগি জয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়, পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবির কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনো ভোলা যায় নাকি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয়, তা কখনো ভুলতে পারি আমরা? তিনি বলেন, আমি তো পাঠক, একজন দর্শক। আমি স্রষ্টা নই, সৃষ্টিকর্ম তো আমার নেই। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের মহামেলায় আমার কাজটা কী হবে? বীরভূমের গ্রামের ভাষায় রাজমিস্ত্রিদের সিমেন্ট, বালু, মসলা ইত্যাদি এনে দেওয়া লোকদের বলা হয় জোগাই। এ সম্মেলনে আমার কাজটা এখানে অনেকটা জোগাইয়ের মতো।

১৯৬৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমি খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাইনি। ২৫ বছর মন্ত্রী ছিলাম। সরকারি কাজ, সংসদীয় কাজের ঠেলায় পড়ার সময় পাইনি। ৩৩০ কক্ষের রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে ভাবলাম এখানে কী করব? প্রধানমন্ত্রী ফাইল পাঠাবেন, আইন প্রণয়ন করবেন সাংসদরা, আমি তাদের পরামর্শ দেব। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সেখানে কম। বছরে একদিন সাংসদদের ডেকে বক্তৃতা দেব, সেখানে দাড়ি-কমা সবটাই মন্ত্রিসভার তৈরি। রাষ্ট্রপতিকে বলতে হবে, মাই গভর্নমেন্ট। কিন্তু যেটা হল, রাষ্ট্রপতি ভবনে আধুনিক ভারতবর্ষের প্রচুর কাগজপত্র, অনেক দুষ্প্রাপ্য গোপনীয় রেকর্ড, পড়ার জন্য প্রচুর উপাদান পেয়ে গেলাম। এসব পড়তে গেলে তো এক প্রেসিডেন্সিয়াল টার্মে হবে না, তিনটা টার্ম লাগবে। তার আগেই ঈশ্বরের সমন এসে যাবে। আমি ভাবলাম, যতটা পারা যায়, আমি পড়ব। মানুষে-মানুষে হিংসা-দ্বন্দ্ব, জাতিগত সংঘাত, সন্ত্রাসবাদের বিস্তারে আতঙ্কিত হন প্রণব। তার ভাষ্য, পরিবেশ দূষণের চেয়েও মানুষের চিন্তা-ভাবনা-মননের দূষণের ভয়াবহতা ‘আরও বড়’। হিংস্রতা প্রতিহত করতে জাতিসংঘ বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় কোনো সম্মেলন থেকে সমাধান আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।

প্রণব বলেন, ভয়াবহ এই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব স্রষ্টাদের। সাহিত্যিক, কবি, লেখকরা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করবেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির স্মরণে তিনি বলেন, হাজারো বছরের বাঙালি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যকে তারা লুট হয়ে যেতে দেননি। আগ্রাসকদের হাতে ধ্বংস হয়ে যেতে দেননি। সংস্কৃতিকে তারা রক্ষা করেছেন। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বুকের রক্ত ঢেলেছে বাঙালি, তার পর অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বাংলাকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালিরা। এ দেশে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন হবে না তো কোথায় হবে?

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT