সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ বুধবার ।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
হত্যাচেষ্টাকারী বখাটে বদরুল আলমের ভাগ্যে কি আছে? কি বায় হচ্ছে? তা দেখার অপেক্ষায় দেশ-বিদেশের মানুষের দৃষ্টি আজ সিলেটের আদালতে।
তবে বিচারের এই দিনটি যখন নারী দিবস, দিবসটিতে দেশবাসীর প্রত্যাশা হয়তো বদরুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে।
আদালতের সরকারি কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বলেন, তথ্য প্রমাণাদিতে দেখা যায় নার্গিসকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে, আমরা আদালতের সামনে তা তুলে ধরতে পেরেছি। তবে এ আদালতে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে দরখাস্তের মাধ্যমে মামলাটি মহানগর আদালতে নিয়েছি, যাতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম বলেন, রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি হোক আমরাও চাই। দুপুরে আদালত সব এভিডেন্স বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দেবেন।
সিলেট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, মামলার প্রমাণাদিতে সন্তুষ্ট হয়ে রায়ে বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন বিচারক, এমনটি আশাবাদী তিনি।
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর বিকেলে পরীক্ষা শেষে এমসি কলেজ কেন্দ্র থেকে বের হয় নার্গিস। ক্যাম্পাসে পুকুর পাড় সংলগ্ন সড়কে তার পথ আগলে ধরে বদরুল। হাত ধরে প্রেম নিবেদনের চেষ্টা, অতঃপর তার আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায় নার্গিসকে উপুর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। রাস্তায় যখন জ্ঞান হারিয়ে নার্গিস মৃতপ্রায়, তখনও হায়েনার মতো তার ওপর চাপাতি নিয়ে আঁছড়ে পড়েছিল বদরুল। হামলার পর কথিত প্রেমিক শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুলকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। হামলার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন এবং সমাবেশ হয়।
রক্তাক্ত নার্গিসকে উদ্ধারের পর সিলেট ওসমানী হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে তাকে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সেখানে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন নার্গিস।
এদিকে, ঘটনার পরদিন (০৪ অক্টোবর) নার্গিসের চাচা আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে একমাত্র বদরুলকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বছরের ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। ৮ নভেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশীদ বদরুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।
মহানগর মুখ্য হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো’র আদালতে মামলার ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ৫ ডিসেম্বর সাক্ষী দেন ১৭ জন, ১১ ডিসেম্বর নার্গিসের মা-বাবা ও তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১৫ জন এবং ১৫ ডিসেম্বর সাক্ষী দেন স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক। সবশেষ ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে সাক্ষ্য দেন নার্গিস।