ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলাম কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে কাউকে কোনো বিষয়ে অতিরঞ্জিত কিছু করার শিক্ষা দেয় না। ইসলাম সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বনেরই শিক্ষা দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা এটাই যে, তার বান্দা যেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করে জীবন পরিচালনা করে কোনোভাবেই যেন অহঙ্কার প্রকাশ না পায়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর (অহঙ্কারবশে) মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং ঔদ্ধত্যের সঙ্গে পৃথিবীতে চলাফেরা করো না। আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। আর তোমার চলাফেরায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রাখো। নিশ্চয় সবচেয়ে অপ্রীতিকর স্বর হলো গাধার স্বর’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৮-১৯)।
এই আয়াতদ্বয় থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ কোনো অহঙ্কারী ও দাম্ভিককে যেমন পছন্দ করেন না, অন্যদিকে তিনি চান তাঁর বান্দা যেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন, ‘আর এভাবেই আমি তোমাদের এক মধ্যপন্থী উম্মতরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যেন তোমরা (গোটা) মানবজাতির তত্ত্বাবধায়ক হও এবং এ রাসুল তোমাদের তত্ত্বাবধায়ক হয়’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৩)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘তুমি বল, তোমরা আল্লাহ বলে ডাকো বা রহমান বলে ডাকো, যে নামেই তাঁকে ডাকো, সব সুন্দরতম নাম তাঁরই। আর তুমি তোমার দোয়া অতি উঁচু স্বরেও করো না বা অতি নিম্ন স্বরেও (করো না), বরং এ দুয়ের মাঝামাঝি পথ অবলম্বন করো’ (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত : ১১০)। তাই আমরা যা কিছুই করি না কেন মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন সহজ। যে কেউ দ্বীনের কাজে বেশি কড়াকড়ি করে তাকে দ্বীন অবশ্যই পরাজিত করে দেয়। কাজেই তোমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করো এবং দ্বীনের কাছাকাছি হও, আর হাসিমুখে থাক এবং সকালে ও রাতের কিছু অংশে ইবাদতের মাধ্যমে সাহায্য চাও’ (বোখারি, কিতাবুল ইমান)।
অপর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি শুনেছি নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির নেক আমল কখনো তাকে জান্নাতে নিতে পারবে না।’ লোকজন বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও না? হুজুর (সা.) বললেন, না, আমাকেও না, যতক্ষণ না আল্লাহর রহমত ও ফজল আমাকে ঘিরে ফেলে। এ জন্য তোমরা মধ্যমপন্থা, সিরাতুল মুস্তাকিম অবলম্বন করো এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রয়াস চালিয়ে যাও’ (বোখারি, কিতাবুল মারজা)। আমরা কি পারি না, আমাদের এই সুন্দর জীবনটাকে কোরআন ও হাদিসের আলোয় গড়ে তুলতে? আসুন না, আমরা সবাই সবার কল্যাণের চিন্তা করি, কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ির পরিবর্তে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করি। আমরা যদি জীবনের সর্বক্ষেত্রে মধ্যপন্থার ওপর আমল করে জীবন পরিচালনা করতাম তাহলে ঝগড়া-বিবাদ আর নৈরাজ্য সংঘটিতই হতো না।
আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।
(সংগ্রহীত)