ইসলামের আলোকিত জীবেন একজন নারীকে কিভাবে দেখা হয়? ইসলামে নারী সমাজ তথা মায়ের জাতিকে প্রত্যেক সন্তানের জন্য প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ মাতৃকোড়ই শিশুর জন্য প্রথম বিদ্যানিকেতন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সমাজ জীবনে যা কিছুর প্রয়োজন, মা-ই শিশুকে ছোট বেলা থেকেই কোলে-কাখে রেখে শিখিয়ে থাকে। মায়ের শিখানো বিষয়গুলোই প্রতিটি সন্তান বড় হয়ে বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটায়। তাই নারী জাতির আদর্শ বৈশিষ্ট্যগুলো জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
একজন আদর্শ নারীর বৈশিষ্ট্য কেমন হবে। সংসার জীবনে স্বামী-সন্তানের জন্য তার কাজগুলো যদি হয় উত্তম গুণাবলী সম্পন্ন তবেই দুনিয়াতে ভোগ করবে স্বর্গীয় সূধা। সমাজ পাবে আদর্শ প্রজন্ম আর আখিরাতের জীবনে থাকবে তাদের জন্য মুক্তি ও চিরকালীন সুখ-শান্তির পুরস্কার।
১. পর্দাশীল ও লজ্জাশীল হওয়া
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নারী-পুরুষের ওপর পর্দা ফরজ করেছেন। তাই পর্দা পালন প্রত্যেক সম্ভ্রান্ত নারী-পুরুষের জন্য একান্ত আব্শ্যক। পর্দার মাধ্যমেই মানুষের মাঝে জাগরিত হয় লজ্জা। পর্দা ও লজ্জাই একজন পর্দাশীল নারীকে যে কারো সঙ্গেই অবাধ মেলামেশা, চলফেরা থেকে হেফাজত করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `আলহায়ায়ু শু`বাতু মিনাল ইমান` অর্থাৎ- লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ।
২. ধৈর্যশীল হওয়া
ধৈর্য মহৎ গুণ। পারিবারিক জীবনে ধৈর্যশীল নারীর বিকল্প নেই। আদর্শ পরিবার গঠনে ধৈর্যশীলতার বিকল্প নেই। আর এ ধৈর্যশীলতা আল্লাহর একটি স্পেশাল গুণ। আল্লাহ বলেন, `ইন্নাল্লাহা মাআ`স সাবিরিন` অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
৩. সত্যবাদী হওয়া
সত্যবাদীতা মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ গুণের একটি। যার মাঝে যত বেশি সত্যবাদীতা রয়েছে তার মাঝে ততবেশি ঈমানদারিতা রয়েছে। নারী যদি সত্যবাদী হয় পরিবারের প্রত্যেকটি লোকই সত্য বলতে শিখে। `আসসিদকু ইনজিহ ওয়াল কিজবু ইউহলিক` অর্থাৎ সত্যই (মানুষকে) নাজাত দেয়; মিথ্যা মানুষকে ধংস করে।
৪. কোমলতা
মানুষের সর্বোত্তম গুণের একটি হচ্ছে কোমলতা। কোমল চরিত্রের নারী পরিবারের জন্য অাল্লাহর সীমাহীন নেয়ামত স্বরূপ। সুন্দর আচার-আচরণ কোমলতার দ্বারাই প্রকাশ পায়। এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ধংসের দুআ করেন অর্থাৎ আসসামু আলাইকিুম বলে। তখন উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু ঐ ব্যক্তিকে অভিশম্পাত করলে রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আয়িশা! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা দয়া ও কোমলাকে ভালোবাসেন।
৫. উত্তম ব্যবহারকারী হওয়া
পৃথিবীতে সেই ব্যক্তিই সন্মানিত ও অনুকরণীয় আদর্শ যার ব্যবহার উত্তম। পরিবারের নারী যদি উত্তম ব্যবহারের অধিকারী হয়, তবে অবশ্যই তার থেকে পরিবারের সদস্যগণ উত্তম ব্যবহার শিখবে। আর উত্তম ব্যবহারকারীরাই কিয়ামতের দিন আল্লাহর একান্ত নেক দৃষ্টি লাভে ধন্য হবে।
৬. শোকরগুজারকারী হওয়া
পরিবার প্রতিপালনে ভালো-মন্দ, অভাব-অনটন সর্বাবস্থায় আল্লাহ ওপর শোকরগুজারকারী নারীর মর্যাদা অত্যধিক। যা দেখে পরিবারের ছোট্ট সোনা-মনিরা শোকরগুজারকারী হতে শিখবে। কিভাবে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর আদায় করতে হয়। তাইতো শোকরগুজারকারী নারী পরিবারের জন্য আল্লাহর রহমত।
৭. আনুগত্যশীল হওয়া
পরিবারের কর্তা ব্যক্তি পুরুষ হোক বা নারী হোক তাঁর প্রতিটি কথা-বার্তা বিনয়ের সহিত মেনে নেয়াই হচ্ছে আনুগত্য। তাইতো পরিবারে আনুগত্যই হচ্ছে শান্তির একমাত্র পথ। আনুগত্য মেনে নেয়ার মাঝেই উন্নত নেতৃত্ব ও মননশীলতা তৈরি হয়।
৮. দায়িত্বশীল হওয়া
পরিবারের প্রতিটি কাজ-কর্ম সম্পাদন, ধন-সম্পদ সংরক্ষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা নারীর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ দায়িত্বশীলতা অনেক বড় গুণ। সন্তানের মাঝে দায়িত্বের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রত্যেক মায়েদের আবশ্যক কর্তব্য।
সুতরাং শিক্ষা হওয়া চাই এমন-
পরিবারের প্রত্যেক শিশুর প্রথম শিক্ষকই হল মা। মা শিশুকে উপরের দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে নিজের পালনের মাধ্যমেই শিক্ষা দিবেন। শিশুরা মাকে দেখে দেখেই শিখবে। সুতরাং মাকেই সব সময় উত্তম শিক্ষাগ্রহণ করে বাস্তবায়ন করা একান্ত আবশ্যক। এ গুণগুলো প্রত্যেক পরিবারের নারীদের মাঝে যত বেশি বাস্তবায়িত হবে, তাদের সন্তান-সন্ততি বড় হয়ে সে গুণের বহিঃপ্রকাশই করবে কর্মজীবনে, এটই স্বাভাবিক। আল্লাহ আমাদের দেশের তথা সমাজের প্রত্যেক নারীকে উক্ত গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।