বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
১০ উইকেটে হার মাশরাফিদের
প্রকাশ: ১২:০০ am ১৬-১০-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৫২ am ১৬-১০-২০১৭
 
 
 


১০ উইকেটে হারের অভিজ্ঞতা নতুন নয় বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু এমন বড় লক্ষ্য দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবধানে কখনো হারতে হয়নি। কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার রেকর্ড জুটিতে পৌনে তিনশ রানের লক্ষ্যও অনায়াসে পেরিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভালে রোববার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিসের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ২৭৮ রান করে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় এটাই তাদের সর্বোচ্চ। কিন্তু ৪২ ওভার ৫ বলে কোনো উইকেট না হারিয়ে এই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

গত বছর ২৫৫ রানের লক্ষ্য দিয়ে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে হারে শ্রীলঙ্কা। ১০ উইকেটে হারের ম্যাচে সর্বোচ্চ লক্ষ্য ছিল সেটিই। সেই বিব্রতকর রেকর্ড এখন বাংলাদেশের।

ম্যাচের শেষ দিকে সুযোগ এসেছিল বিব্রতকর রেকর্ড থেকে বেঁচে যাওয়ার। হয়নি নাসির হোসেনের ব্যর্থতায়। মাশরাফির বলে ডি ককের ক্যাচ ছুটে যায় তার হাত থেকে।

ওয়ানডেতে এ নিয়ে দ্বাদশবার ১০ উইকেটে হারল বাংলাদেশ। সবশেষ ২০০৮ সালে এই তেতো স্বাদ পেয়েছিল তারা।

চার পেসার আর তিন স্পিনার ব্যবহার করেও দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি ভাঙতে পারেননি মাশরাফি। তার দলের কেউ ভাবাতেও পারেনি দুই ব্যাটসম্যানকে। একদম অনায়াস জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন ডি কক, আমলা। তাদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে বোলাররা। মাত্র দুটি সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তা কাজে লাগেনি।

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হয়ে যায় ১৫৫ পেরুতেই।

২৪৭ পার হতেই হয়ে যায় উদ্বোধনী জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ। অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে ডেভিড মিলার ও জেপি দুমিনির ২৫৬ ছাড়িয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের সেরা উইকেট জুটির (২৮২) রেকর্ড এখন ডি কক-আমলার অধিকারে।

আগে ফিফটিতে পৌঁছান ডি কক। সেঞ্চুরিও তুলে নেন তিনিই আগে। আমলা রান করেছেন বলে-বলে। ৯৪ রানে তাসকিন আহমেদের হাতে জীবন পাওয়া আমলা পেয়েছেন ২৬তম সেঞ্চুরি। তার আগেই ডি কক তুলে নেন ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি।

১১২ বলে ৮টি চারে আমলা অপরাজিত থাকেন ১১০ রানে। ডি কক ১৪৫ বলে ২১টি চার আর দুটি ছক্কায় অপরাজিত ১৬৮ রানে।   

খুব একটা ভালো বোলিং করেননি কেউই। তবে ঝড় বয়ে গেছে যেন অভিষিক্ত মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ওপর দিয়ে। ৫ ওভারে তিনি দেন ৪৬ রান।  

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে প্রায় একাই টানেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংস বড় করতে পারেননি দলের আর কেউ। তাই খুব একটা বড় হয়নি বাংলাদেশের সংগ্রহ।

ম্যাচের আগেও ছিল বড় ধাক্কা। চোটের জন্য ছিটকে যান তামিম ইকবাল। আগের দিন অনুশীলনে চোট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলের সেরা ব্যাটসম্যান ও বোলারকে হারানো বাংলাদেশ নামতে পারেনি পূর্ণ শক্তি নিয়ে।

ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন লিটন দাস। শুরু থেকে তাকে মনে হয়েছে আত্মবিশ্বাসী। ২৯ বলের ছোট ইনিংস তিনি দেখিয়েছেন এখানে রান আছে, শট খেলা সম্ভব।

আঁটসাঁট বোলিং করা কাগিসো রাবাদা ভাঙেন উদ্বোধনী জুটি। তার বলে স্লিপে ফাফ দু প্লেসিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান লিটন।

অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল শুরুতে ভুগছিলেন। মাঝ ব্যাটে খেলতে পারছিলেন না। সিঙ্গেলস বের করতে পারছিলেন না। তার প্রথম ১০ রানের মধ্যে ৮ রান আসে কানায় লেগে পাওয়া দুটি চারে। দুই অঙ্কে যাওয়ার পর নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেন তিনি। আন্দিলে ফেলুকওয়ায়োকে হাঁকান ছক্কা।

কঠিন সময় পার করে দেওয়া ইমরুল ফিরেন বাজে বলে বাজে এক শটে। সফর জুড়ে থিতু হয়ে ফেরা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান আরেকবার করেন তার পুনরাবৃত্তি। লেগ স্টাম্পের শর্ট বলে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।

ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান খেলছিলেন দেখেশুনে। ব্যক্তিগত ১৭ রানের মাথায় পৌঁছান ৫ হাজার রানের মাইলফলকে। তামিমের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই মাইলফলকে গেলেন তিনি।

একই সঙ্গে বিশ্বের পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ৫ হাজার রান ও দুইশ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান সাকিব। ১৭৮ ম্যাচে এই মাইলফলকে পৌঁছে তিনিই দ্রুততম। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের মতো সাকিবও পারেননি নিজের ইনিংস বড় করতে। লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের বলে ফিরেন হাশিম আমলাকে ক্যাচ দিয়ে।

সাকিবের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়া মুশফিক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে উপহার দেন আরেকটি চমৎকার জুটি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুই জনে গড়েন ৭৩ বলে ৬৯ রানের জুটি।

ফিরতি স্পেলে রাবাদাকে ডিপ উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকানো মাহমুদউল্লাহ রান তুলছিলেন দ্রুত। ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের স্লোয়ার শর্ট বলে এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিলারের হাতে।

৪০তম ওভারে দুইশ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। সাব্বির রহমান, নাসির আর সাইফের কাছে দলের দাবি ছিল দ্রুত রান তোলা। সেই চেষ্টাতেই রাবাদার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিন জন। 

ডেন প্যাটারসনকে ছক্কা কাভার দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ৫২ বলে ফিফটিতে পৌঁছান মুশফিক। তার সেঞ্চুরি আসে ১০৮ বলে- রাবাদার বলে দুই রান নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। এটি তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে তার চেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল তামিম ও সাকিবের।

প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ৭ রান দেওয়া রাবাদা শেষ পর্যন্ত ৪৩ রানে নেন ৪ উইকেট। দুটি উইকেট নেন প্রিটোরিয়াস। তারাই দেখিয়েছেন লাইন লেংথ ঠিক থাকলে ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা কতটা কঠিন করা যায়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৮/৭ (ইমরুল ৩১, লিটন ২১, সাকিব ২৯, মুশফিক ১১০*, মাহমুদউল্লাহ ২৬, সাব্বির ১৯, নাসির ১১, সাইফ উদ্দিন ১৬; রাবাদা ৪/৪৩, প্যাটারসন ০/৬৯, তাহির ১/৪৫, প্রিটোরিয়াস ২/৪৮, ফেলুকওয়ায়ো ০/৬০, দুমিনি ০/৮)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪২.৫ ওভারে ২৮২/০ (ডি কক ১৬৮*, আমলা ১১০*; রুবেল ০/৫০, তাসকিন ০/৬১, সাকিব ০/৪৮, সাইফ ০/৪৬, নাসির ০/২৯, মাহমুদউল্লাহ ০/১১)

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT