শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
আজ ২২ শ্রাবণ, বিশ্বকবির ৭৬তম প্রয়াণ দিবস
প্রকাশ: ১০:০০ am ০৬-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:৪৪ am ০৬-০৮-২০১৭
 
 
 


রোববার বাইশে শ্রাবণ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (বাংলা-পঁচিশে বৈশাখ-১২৬৮) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী দীর্ঘ রোগভোগের পর বিশ্বকবি বাংলা ১৩৪৮ সালের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজী ৭ আগষ্ট-১৯৪১) কলকাতায় পৈত্রিক বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। লিখেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার ‘গীতাঞ্জলী’ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে, পাবনা, নাটোরে এবং উড়িষ্যায় জমিদারিগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। তিনি জীবনে বারো বার বিশ্বভ্রমণ করেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমন করেন।

কবির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাখ ঠাকুর মূলত কবি। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে সংগীতেও। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মত্যুর পর ৩৬ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী ’ প্রকাশ পায়।

এ ছাড়া ১৯ খণ্ডের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।

রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের কবিতা ও গানের বানীসহ সৃষ্টিকর্মের মূলসুর হচ্ছে ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা, চিত্ররুপময়তা, আত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, রোমান্টিক, সৌন্দর্যচেতনা, বিশ্বপ্রেম, জীবনদেবতা। রয়েছে ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। তার গদ্যভাষাও কাব্যিক।

তার রচনাসমগ্রে রয়েছে, বাঙালির জীবনবোধ ও ঐতিহ্য সাধনার কালপ্রবাহ। ভারতীয় উপমহাদেশের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধগুলোতে রয়েছে সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজস্ব মতামত ও মানুষের আকাংখার প্রতিফলন। প্রগতিশীল, শিক্ষিত দেশ ও জাতি এবং বিশ্ব গঠনের বানীও অকিাংশকর্মে পরিস্ফূট হয়েছে।

সব কারণে কবির জন্মের পর দেড় শতাধিক বছর অতিক্রান্ত হলেও তার সৃষ্টিকর্ম দেশ-বিদেশে আজও সমধিক সমাদৃত রয়েছে বলে রবীন্দ্র গবেষকরা বিভিন্ন পুস্তকে মতামত রেখেছেন।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি রোববার বিকেল ৪টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বিশেষজ্ঞ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে ‘পরিবেশ, নির্মাণসংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক বক্তৃতা দেবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট স্থপতি, রবীন্দ্র গবেষক ও পরিবেশবিদ অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইব্রাহিম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জমান। পরে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া।

এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, শিশু একাডেমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT