শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ৭ই বৈশাখ ১৪৩১
Smoking
 
অপরুপ সৌন্দর্য়ে ভরা সুপ্তধারা আর সহস্রধারা
প্রকাশ: ১০:২৮ am ২৪-০৭-২০১৭ হালনাগাদ: ১০:৩৬ am ২৪-০৭-২০১৭
 
 
 


আবারো বৃষ্টি, তাই আবারো বর্ষাবিলাস......

অফিসের সাপ্তাহিক একদিনের ছুটিতে আমাদের বর্ষাবিলাসের সবচেয়ে পছন্দের প্লেস হলো মিরসরাই-সিতাকুন্ড রেঞ্জ। যেই ভাবা সেই কাজ... কে কে নেক্সট শুক্রবার ২১ই জুলাই সীতাকুণ্ডে বর্ষাবিলাসে যেতে চায় আমাদের “ছুটি (The Non-Commercial Traveling Group) থেকে ইভেন্ট দিয়ে জানতে চাইলাম… তারপর যেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দ্রুত বাসের টিকেট কেটে ফেললাম।


ছবি ও বর্ণনাঃ মোঃ রাসেল রহমান শাকিল

অতঃপর নির্দিষ্ট দিন ২০ই জুলাই রাতের বাসে আমরা ১২জন রওনা হলাম চট্টগ্রামের পথে… খুব সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের সামনে বাস থেকে নেমে গেলাম। এরপর জনপ্রতি ২০টাকা টিকেট কেটে ঢুকে পরলাম ইকোপার্কে… ভেতরে সিএনজি থাকলেও আমরা হেটেই রওনা দিয়েছি, বৃষ্টি ভেজা সকাল ইকোপার্কের ভেতরের শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে গল্প করতে করতে হাটতে সবার বেশ ভালো লাগছিলো। কিছুক্ষন হাটার পর পথের ধারে পেয়ে গেলাম সুপ্তধারায় যাওয়ার পথ… রাস্তা থেকে সিঁড়ির ধাপ বেয়ে হেটে নিচে নেমে যেতে হবে।  সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে সিঁড়ির শেষ মাথায় একটা ঝিরি… কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঝিরি আর ঝিরি নেই, পানিতে প্রচণ্ড স্রোতের টান একা একা পার হওয়া অসম্ভব! আমরা সবাই একজন আরেকজনের হাত ধরে মানব-শিকল তৈরি করে ধীরে ধীরে ঝিরিটা পার হলাম… ঝর্ণার কাছে যেতে ওইভাবে আমাদেরকে আরো ৪বার ঝিরি পার হতে হয়েছে। ঝর্ণার কাছে এসে আমরা রীতিমতো বাকরুদ্ধ, অনেকদিন পাহাড়ে ঝর্নায় ঘুরে অনেক ঝর্নাই দেখেছি… বর্ষায় ঝর্ণার অন্য রুপ মেলে জানি তাই বলে এমন?? কেমন খ্যাপাটে বুনো হিংস্র রুপে নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে…যেন মুহূর্তে ভেঙ্গে চুরে একাকার করে দিবে সব, এইনা হলো ঝর্ণার আসল রুপ!! আমরা বিমোহিত হয়ে সেই রুপ উপভোগ করলাম। প্রায় ঘন্টাখানেকের ওপর থাকার পর আমরা সেখান থেকে রওনা দিলাম, আমাদের পরবর্তী গন্তব্য পার্কে অবস্থিত আরেকটি ঝর্ণা নাম “সহস্রধারা”।


ছবি ও বর্ণনাঃ মোঃ রাসেল রহমান শাকিল

সুপ্তধারা থেকে পার্কের রাস্তায় উঠে এসে আমরা হাটা দিলাম পার্কের আরো গভীরের দিকে… মোটামুটি ভালোই সময় লেগেছে সহস্রধারায় পৌছতে। আবারো সেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা, এই ঝর্ণার সিঁড়ির সংখ্যা সুপ্তধারার চেয়ে বেশি এবং ভালোই খাঁড়া পথ… নিচে নেমে ছোট্ট একটা ঝিরি হেটে পার হলাম তেমন স্রোত ছিলোনা ঝিরিতে। সহস্রধারাতেও পানির পরিমান অনেক বেশি ছিল বাট সুপ্তধারা দেখে আসার পর এটায় আর আমাদের মন ভরছিলো না… মনে হলো ভুল হয়েছে, আগে সহস্রধারায় এসে তারপর সুপ্তধারায় যাওয়া উচিৎ ছিল!!!! যাইহোক  সহস্রধারাতেও আমরা খুব মজা করলাম ছবি তুললাম তারপর আবার উঠে চলে এলাম পার্কের রাস্তায়। এবার ফেরার পালা… লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে টায়ার্ড তাই সিএনজি নিয়ে নিলাম… সিএনজি একদম সোজা আমাদেরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে এসে নামিয়ে দিয়ে গেছে।

 

সুপ্তধারাঃ

বর্ষাকালে পাহাড়ি ঝর্ণার এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ইকো পার্কে। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলের সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে সুপ্তধারা নামের এই ঝর্ণাটি অবস্থিত।  পার্কের ভেতরে কিছুদূর গেলেই এই বিশাল ঝর্ণার দেখা মিলবে। সবুজ ঘেরা চারপাশের মাঝখানে এই ঝর্ণার রূপ অন্যরকম। দেশের অন্যান্য প্রান্তের ঝর্ণার তুলনায় এটি কিছুটা হাতের নাগালে।


সহস্রধারা ছবিঃ মোঃ রাসেল রহমান শাকিল

কীভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে ট্যাক্সি বা সিএনজি্ অথবা বাসে করে সীতাকুণ্ড বাজার আসতে পারবেন। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার ও সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কিংবা ঢাকা থেকে বাসে গেলে সীতাকুণ্ড বাজারও নেমে যেতে পারেন। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে লোকাল সি.এন.জি বা ইজি বাইক অথবা রিকশায় সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের গেটে চলে আসবেন। পার্কের ভেতরে ম্যাপ দেওয়া আছে। সেটা অনুসরণ করে গেলে ঝর্ণা পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন।

 

সাবধানতা: 

  • ঝর্ণা যাওয়ার পথে দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামা লাগে তাই ভারি ব্যাগ নিয়ে নামবেন না, পরে উঠতে কষ্ট হবে। প্রয়োজনে উপরে ব্যাগগুলো রেখে একজনকে পাহারায় রেখে আসুন।
  • সিঁড়িগুলো বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে যায় তাই সাবধানে সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নামবেন। কারও সাথে প্রতিযোগিতা করতে যাবেন না। জীবনের মূল্য বেশি। ভাল গ্রিপ ওলা বেল্ট স্যান্ডেল পড়ে নেবেন।
  • ঝর্ণায় যাওয়ার পথে ঘন বন পড়বে যা জোঁকের আড্ডাখানা। তাই সাথে লবণ বা গুল নিয়ে নেবেন।
 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT